আফসান চৌধুরী: [১] দুদিন আগে আমাদের এক পুরনো বন্ধুর ফোন পেলাম। থাকে অস্ট্রেলিয়াতে, অধ্যাপক। করোনাকালে সবার মতো অতীত আক্রান্ত, পুরাতন বন্ধুদের খুঁজছে। এটা সেটা গল্পের মধ্যে তার একটা স্মৃতি জানালো। আমাদের দিলু রোডের বসার ঘর ছিলো ঢাকার সবচেয়ে উদার পরিসর। বন্ধুরা এসে যা খুশি খেতো বলতে ভাবতে পারতো, কোনোদিন কেউ বাঁধা দেয়নি। কোনো এক সন্ধ্যার আড্ডা নিয়ে।
[২] আমাদের চা বিস্কুট দিতো মোস্তফা নামের কাজের লোক। তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেই। কারণ সে গ্রামের ছেলে, যা কাজ করার করেছে, তারপর ঢাকায় পালিয়ে চলে আসে। জীবনেও বদলে কিছু চায়নি। অমন মানুষ গ্রামে ভরা। আমাদের বাসায় ছিলো ৫০ বছর। আমার মা ভাড়া বাড়িতে একলা মারা যান, কোনো ছেলেদের কাছে থাকবেন না বলেও যে গৃহে স্বামী মারা যায় ওই ফ্ল্যাটেই মা মারা যায়। এই মোস্তফা ছিলো শেষ পর্যন্ত মায়ের কাছে।
[৩] ১৯৭৬ সালের কোনো একসময় যখন আড্ডা, চা, সিগারেট, গাঞ্জা তুঙ্গে তখন হঠাৎ আমার বড় ভাই এসে জানালেন, ‘তোমাদের পরীক্ষার তারিখ পিছিয়েছে’ আমরা সবাই আনন্দ করতে লাগলাম। এই মোস্তফা কাপ পিরিচ সরাচ্ছিলো। আমাদের দিকে করুণা আর অবজ্ঞা মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে বললো, ‘আল্লাহ বাঁচাইছে। না হইলে তো একটাও পাস করতো না। আমরা আরও জোরে হাসতে লাগলাম।
[৪] আমার বন্ধুর মনে আজ এই স্মৃতি উজ্জ্বল শত স্মৃতি বাদ দিয়ে। মোস্তফা বয়স্ক, এখন গ্রামে থাকে, অসুস্থ। তবে এটাও ঠিক ওই আটজন আমরা গোটা ঢাকা ইউনিভার্সিটির শ্রেষ্ঠ ২০ জনের ভেতর ছিলাম পরীক্ষায়, সবাই কোনো না কোনো সময় অধ্যাপনা করেছে।
লেখক: গবেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক