শিরোনাম
◈ যুদ্ধ বন্ধের শর্তেই ইসরায়েলি জিম্মিদের ছাড়বে হামাস ◈ হরলিক্স আর স্বাস্থ্যকর পানীয় নয়  ◈ বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী ◈ থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে  প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ আন্তরিক অভ্যর্থনা ◈ যে কোনো ভিসাধারী পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারবেন  ◈ পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফে'র গুলিতে বাংলাদেশি নিহত ◈  কমবে তাপমাত্রা, মে মাসেই কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টির সম্ভাবনা ◈ বাংলাদেশ-চীন সামরিক মহড়া মে মাসে, নজর রাখবে ভারত ◈ দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু: চুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, যান চলাচল শুরু ◈ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ভারত, চীন বা রাশিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত নয়: মার্কিন কর্মকর্তা

প্রকাশিত : ২০ মে, ২০২১, ০১:৫০ রাত
আপডেট : ২০ মে, ২০২১, ০১:৫০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আলী রীয়াজ: কেবল রোজিনা ইসলামের জামিনের মধ্যেই যেন সন্তষ্টি না খুঁজি

আলী রীয়াজ: বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং সাংবাদিকতা বিষয়ে উৎসাহীরা নিসন্দেহে ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই সংবাদপত্রে প্রকাশিত ‘পেন্টাগন পেপার্স’ বিষয়ে অবগত আছেন। আগে না জানলেও গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিষয়ে অনেকটাই জেনেছেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিষয়ে মার্কিন সরকারের প্রতিরক্ষা দফতর একটি সমীক্ষা করে ১৯৬৭ সালে, সেই সমীক্ষা যারা করেন তাদের একজন ড্যানিয়েল এলসবার্গ, এই গোপন দলিলগুলো নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকের হাতে তুলে দেন ১৯৭১ সালে কেননা তিনি সরকারি ভাষ্যের সঙ্গে একমত ছিলেন না। তার বক্তব্য ছিলো এগুলো মার্কিন নাগরিক, যাদের অর্থে ভিয়েতনামে যুদ্ধ চালানো হচ্ছে, তাদের জানার অধিকার আছে। তিনি মনে করেছেন যে সরকার মিথ্যাচার করছে। একই সময় ওয়াশিংটন পোস্টের হাতেও এই দলিলগুলো পৌঁছে। দুই পত্রিকাই এগুলো ছাপার উদ্যোগ নেয়।

নিউইয়র্ক টাইমস ১৩ জুন থেকে ধারাবাহিকভাবে এই বিষয়ে প্রতিবেদন এবং দলিল ছাপতে শুরু করার পরে তিন দিনের মাথায় আইন মন্ত্রণালয় আদালতের কাছ থেকে সাময়িক রেস্ট্রেইনিং অর্ডার লাভ করে। এর আগে হোয়াইট হাউজ এগুলো না ছাপতে অনুরোধ করেছিলো পরে হুমকি দিয়েছিলো যে তাদের রিপোর্টারদের হোয়াইট হাউসে প্রবেশাধিকার থাকবে না। সরকারের বক্তব্য ছিলো  এগুলো প্রকাশিত হলে ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ বিঘ্নিত হবে। নিউইয়র্ক টাইমস এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত হয়। সেই সময়ে নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে যোগ দেয় ওয়াশিংটন পোস্ট; দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সংবাদপত্র একত্রে সরকারের বিরুদ্ধে লড়েছিলো এ কথা বলে যে নাগরিকের জানার অধিকার রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ৬-৩ ভোটে রায় দিয়েছিলো যে, সরকার এটা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে যে কেনো এসব দলিল প্রকাশের ফলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। এরপরে বোস্টন গ্লোব এবং অন্যান্য কাগজেও এইসব গোপন দলিল প্রকাশিত হয়।

একপর্যায়ে এসে সিনেটের এক সাব-কমিটির শুনানিতে সিনেটর মাইক গ্রাভেল এই সব দলিলের অংশবিশেষ জোরে জোরে পড়ে শুনিয়েছিলেন যাতে করে এই দলিলগুলো প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। পরে নিক্সন প্রশাসন এলসবার্গ আর তার সহযোগী এন্থনিও রুশোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, গোয়েন্দাবৃত্তি এবং সরকারি সম্পত্তি চুরির মামলা করেছিলো, সেই মামলায়ও সরকার পরাজিত হয়েছিলো। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ এর আওতায় আনা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনাগুলো আবার স্মরণ করলাম; কারণ একটি- তা হচ্ছে কি করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে প্রতিদ্বন্দ্বী সংবাদপত্রগুলো একত্রিত হয়েছিলো। (যারা এই সময়ে ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক, পরিচালক এবং সম্পাদক কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা দেখতে উৎসাহী তারা স্টিভেন স্পিলবার্গের তৈরি করা ছায়াছবি দ্য ‘পোস্ট’ দেখতে পারেন)। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জন্যে এই রকম মুহূর্ত তৈরি হয়েছে বলেই আমার ধারণা। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনা মামলার মেরিট ইত্যাদি নিয়ে আইনজীবীরা ইতোমধ্যেই বলেছেন, তারা রোজিনা ইসলাম বা তার পক্ষ থেকে কীভাবে মামলা করা যায় সেই বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এই মামলার মর্মবস্ত কেবল তার বিরুদ্ধে আনা কোনো ব্যক্তিগত মামলা বলে বিবেচিত হতে পারে না। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জন্যে যে আইন ব্যবহৃত হয়েছে সেটা নিয়েই প্রশ্ন তোলা দরকার।

আশা করি আগামীকাল বা পরশু রোজিনা উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করবেন, হয়তো এই মামলা এক সময় হিমাগারে গিয়ে উপস্থিত হবে। কিন্তু এই মামলার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে এই আইনের প্রয়োগের সূচনা হল। সেটার কারণেই এখন এই কথাগুলো বলা দরকার। ফলে কেবল রোজিনা ইসলামের জামিনের মধ্যেই যেন সন্তষ্টি না খুঁজি। জামিন হলেই যেন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ দিয়ে আনন্দের বন্যা না বইয়ে  দেই। জামিন প্রাপ্তি নাগরিক হিসেবে তার অধিকার। তিনি বা তার পক্ষে মামলা করা হবে কীনা সেটাও আলাদা বিষয়। যা বিবেচনার তা হচ্ছে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ব্যবহার। আমি জানি বাংলাদেশের সংবাদপত্রের মালিকানার ধরন, গণমাধ্যমের দলীয় সংশ্লিষ্টতা এবং দেশে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির কারণে আমার এই প্রত্যাশাকে অনেকে নির্বোধসুলভ মনে করতে পারেন, আমি তাদের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করবোনা। কিন্ত ঘটনাপ্রবাহের কারণে এই কথাগুলো ইতিহাসের স্বার্থে হলেও বলে রাখা কর্তব্য মনে করে লিখে রাখলাম। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের এবং সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্তরা ভেবে দেখতে পারেন। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়