আতিক খান: বাবুল আক্তারকে তার স্ত্রী মাহমুদা মিতুর সন্দেহভাজন খুনি হিসেবে গ্রেপ্তার করায় কারা কারা অবাক হয়েছেন? বাবুল আক্তার দুটো আচরণ দিয়ে পুরো জাতিকে বিভ্রান্ত করেছিলেন। প্রথমটা অস্কার জয়ী সেই কান্নার অভিনয় আর দ্বিতীয়টা হত্যাকাণ্ডের পরপর সন্তানসহ শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে উঠা। আরো কিছু ব্যাপার বাবুল আক্তারের পক্ষে গিয়েছিল। কেউ কি নিজ বাসার ঠিক সামনেই এরকম হত্যার পরিকল্পনা করতে পারে? তাছাড়া সেইসময় বাবুল আক্তার জঙ্গীবাদ নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছিলেন, তাই জঙ্গীদের দিকে বাবুলের সন্দেহ প্রকাশ অনেকেই বিশ্বাস করেছিল। বাবুল ৪ বারের পুলিশ পদক পাওয়া এসপি ছিলো। আর বাবুল নিজ হতেই কয়েকজনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে। তাই সবকিছু মিলিয়ে বাবুল আক্তারের প্রতি জনগণের সহানুভূতি থাকা আর সমর্থন দেওয়া অবাক হবার মতো বিষয় ছিলো না। খুব অল্প সময়েই এই মামলার কয়েকজন আসামী ধরা পড়েছিল। কিন্তু মূল আসামী আর হত্যাকাণ্ডের লিংক মুসা গ্রেপ্তার না হওয়াতে কেইসটা সমাধান করা কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আর পুলিশের বিভিন্ন এজেন্সি এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার নিলেও কেউই সমাধান করেননি বা করতে আগ্রহী হননি। এর একটা কারণ হতে পারে বাবুল পুলিশ বিভাগের পুরষ্কৃত এসপি ছিলেন। তাই ৫ বছর পরে হলেও শেষ পর্যন্ত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ায় পিবিআইকে অনেক ধন্যবাদ। পিবিআই অবশ্য এই কেইসের তদন্ত শুরু করে মাত্র ৬ মাস আগে। যেসব ক্লু হতে বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হলো, সেগুলো হলো- ২৭ সেকেন্ডের একটা অডিও ক্লিপ যেখানে বাবুল মিতু হত্যার পর মুসাকে প্রশ্ন করেছেন, মিতুকে কোপানো হল কেন? অর্থাৎ, হয়তো শুধুই গুলির নির্দেশ ছিল।- হত্যাকাণ্ডের চুক্তি অনুযায়ী বাবুল, সোর্স মুসার যেসব আত্মীয়কে ৩ লাখ টাকা বিকাশ করেছিলেন, তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। - কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেওয়া মুসাকে, বাবুল না চেনার ভান করেছিলেন। অথচ, এই মুসা বাবুলের বাড়িতে বহুবার গিয়েছে এবং দুজনের অডিও ক্লিপের রেকর্ডও আছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যার ঠিক আগেও মুসা হত্যার স্পটের সামনে দিয়ে মোটর বাইকে করে গিয়েছিল।
জনমত আর মিডিয়া বাবুল আক্তারের দিকে থাকলেও হত্যার কয়েক সপ্তাহ পর হতেই হত্যাকাণ্ডে বাবুলের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল।- কয়েকটা মিডিয়াতে এসময় কক্সবাজারের এক এনজিওতে কাজ করা গায়ত্রী নামের এক ভারতীয় নারীর বাবুলের সাথে পরকিয়া সম্পর্কের ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। মিডিয়াগুলো দুর্বল হওয়াতে সেই রিপোর্ট অবশ্য ধামাচাপা পড়ে।- মিতুর বাবা-মাও এইসময় হত্যায় জড়িত সন্দেহে বাবুলকে ইঙ্গিত করেন। কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। মিতুর বাবা-মা, বাবুলের কক্সবাজারে এএসপি হিসেবে কাজ করার সময় ২০১৩ হতে তৈরি হওয়া এই পরকিয়া সম্পর্ক নিয়ে মিতুর সংসারে অশান্তি হবার বিষয়টা জানতেন।- বাবুল এসময় সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে আলাদা বসবাস শুরু করেন। আবারও লোমহর্ষক এক হত্যার কারণ হিসেবে পরকিয়ার ব্যাপারটা উঠে আসল। বাবুল একজন সফল পুলিশ অফিসার ছিলেন।
অন্য কাউকে ভাল লাগলে মিতুকে আইনগতভাবে ডিভোর্স দিয়ে সেই মেয়েকে বিয়ে করতে পারতেন। এতে নিরীহ কারো জীবন যেত না, সন্তানগুলাও একই সাথে বাবা-মা হারা হতো না। আবার কিলিং মিশনের নেতা মুসাকেও হত্যা করে দুনিয়া হতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা তদন্ত সাপেক্ষে হয়তো সেটাও জানা যাবে। ৩ লাখ টাকা দিয়ে এতোজন পরপুরুষ এর হাতে বাসার সামনে নিজের জীবনসঙ্গিনীকে, সন্তানদের মাকে হত্যা করানো কি ভয়াবহ আর নৃশংস একটা কাজ। তাদের সন্তান দুইটা কি পরিমাণ মানসিক আঘাত নিয়ে বড় হবে চিন্তাই করা যায় না। মিতু হত্যায় বাবুল আক্তার নির্দেশদাতা হয়ে থাকলে সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত...। ফেসবুক থেকে