আরিফুল ইসলাম:[২] হেফাজতের হরতাল তাণ্ডবের দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে অনধিকার প্রবেশ করে পুলিশের গাড়ি, রেকার ও মহাসড়কে চলাচলকারী আটককৃত ডাম্পিং-এ থাকা গাড়ি-সিএনজি অটোরিকশা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা লুটে নেয় বেশকিছু উগ্রবাদী লোক।
[৩] এ ঘটনায় খাটিহাতা হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট মাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ৩১ মার্চ সরাইল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৮জনের নাম উল্লেখ সহ ৩/৪ হাজার লোককে আসামি করা হয়।এদিকে এ মামলা প্রথমে হাইওয়ে থানাপুলিশকে তদন্তের ভার দেয়া হলেও পরবর্তীতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ১৩ এপ্রিল এই মামলার তদন্তের ভার গ্রহণ করেন সরাইল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কবির হোসেন।
[৪] পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইন্সপেক্টর কবির হোসেন এ মামলার তদন্তের ভার পাবার পর অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে তৎপর হয়ে ওঠেন। তিনি অভিযান চালিয়ে এ মামলার প্রধান আসামি সরাইল উপজেলা সদরের পূর্ব কুট্টাপাড়া গ্রামের মৃত আফরোজ মিয়ার ছেলে আল আমীন (৩৫)-কে গ্রেফতার করেন।
[৫] পরে আল আমীনের কাছ থেকে সেদিন হাইওয়ে থানাপুলিশের ডাম্পিং থেকে লুটে নেয়া একটি সিএনজি অটোরিকশাও উদ্ধার করেন ইন্সপেক্টর কবির হোসেন। মাত্র ১৬ দিনে তিনি অভিযান চালিয়ে এ মামলায় ৩৯ জন আসামিকে শনাক্তের পর গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। এ মামলায় তাঁর এই সাফল্যে অভিভূত সংশ্লিষ্ট সকলে।
[৬] এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) রাতে এক সাক্ষাৎকারে সরাইল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কবির হোসেন বলেন, জেলার সফল পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান স্যারের দিকনির্দেশনা ও সরাইল সার্কেল-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান স্যারের নেতৃত্বে আমি এ মামলায় এতোটুকু পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছি। স্যারদের যথাযথ তদারকিতে এ মামলার বাকি আসামিদের গ্রেফতারসহ লুটে নেয়া সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধারে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি সফল হবো, ইনশাআল্লাহ।
[৭] এক প্রশ্নের জবাবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর কবির হোসেন বলেন, সেদিন মহাসড়কে তাণ্ডব ও হাইওয়ে পুলিশের ডাম্পিং-এ আগুন সন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। যারা তাণ্ডবে অংশ নিয়ে আগুন সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তথ্য প্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
[৮] তিনি আরও বলেন, ছবি ও ভিডিও দেখেই শনাক্তের পর অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। নইলে সমাজের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের তদবিরের যে চাপ; পুলিশের কাছে এসব তথ্য প্রমাণ না থাকলে এখানে টিকে থাকাই একপ্রকার মুশকিল ছিল। ইন্সপেক্টর কবির হোসেন বলেন, গ্রেফতার ৩৯ জনের মধ্যে ৩জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। ইতোমধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত অনেককেই শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি; তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
[৯] উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতালের সময়ে খাটিহাতা হাইওয়ে থানাসহ ডাম্পিং-এ হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা চালানো হয়। এসময় থানার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, পুলিশ সদস্যদের পোশাক, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, কম্পিউটার, রেকার, সাঁজোয়া যান (এপিসি), দুটি পিকআপ ভ্যান, পাঁচটি অস্ত্র, গুলিসহ সব ধ্বংস হয়ে যায়।
[১০] হামলার সময় ১০-১২টি মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে আটক কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা লুটে নেয় হামলাকারীরা। এ সময় হাইওয়ে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে সাড়ে চার শতাধিক গুলি ছুঁড়ে। এতে দুজন নিহত ও ছয়জন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় ৩১ মার্চ দুটি মামলা হয়।
[১১] খাটিহাতা হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট মাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে সরাইল থানায় একটি এবং এসআই শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। সরাইল থানায় দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছেন ইন্সপেক্টর কবির হোসেন। আর সদর থানার মামলটি তদন্ত করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ইসমাইল হোসেন।সম্পাদনা:অনন্যা আফরিন