শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ০৫:০০ সকাল
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মঞ্জুরে খোদা টরিক: আমিও কওমি মাদ্রাসায় রাজনীতি বন্ধের বিপক্ষে, তবে কিছু কথা আছে

মঞ্জুরে খোদা টরিক: কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়ায় অনেককে হা-হুতাশ করতে দেখছি। এ কি হলো রে, কওমি মাদ্রাসায় কেন রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো, তাহলে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকদেরও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষারধারা নিয়ে আমার বক্তব্য কী, সে কথা অনেক দিন ধরেই বলছি। আজ সে আলাপে না গিয়ে কওমি মাদ্রাসায় রাজনীতি থাকা উচিত কিনা সেখানেই থাকি। আমিও কওমি মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে কিন্তু কথা আছে। আপনারা যারা কওমি মাদ্রাসায় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির অধিকারের সাথে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকের রাজনীতির অধিকারকে এক করে দেখছেন তাদের পক্ষপাত পরিষ্কার। যারা বা সমাজের যে অংশ এর বিরোধিতা করছেন তাদের রাজনৈতিক অবস্থান অস্পষ্ট নয় আমরা জানি। কওমি ও ইসলামী ভাবাদর্শের রাজনীতির সমর্থকরাই এখন তাদের পক্ষে গণতন্ত্র ও অধিকারের কথা বলছেন, যারা অন্যদের সেই একই অধিকারকে স্বীকার করে না, মানে না। তার কয়টা প্রমাণ চান আপনারা?  দেশের যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষকের রাজনীতি স্বীকৃত সেখানে সকল সংগঠনের, দলের, দর্শনের রাজনীতি স্বীকৃত আছে। সেখানে সকল ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তা স্বাধীনভাবে যেকোনো সংগঠন-দল, তন্ত্র-মন্ত্র করতে পারে কিন্তু মাদ্রাসায় যারা লেখাপড়া করেন তারা কোনো ইসলামী দল ছাড়া অন্য কোনো দল, দর্শনের রাজনীতি কি করতে পারেন?

কওমি মাদ্রাসায় কি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, কমিউনিস্ট পার্টি অন্য কোনো ডান-বাম দলের রাজনীতি করার অধিকার কি স্বীকৃত? সেখানে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ফ্রন্ট, ফেডারেশন, মৈত্রীর রাজনীতি করার অধিকার আছে? হেফাজতভুক্ত সংগঠন ছাড়া সেখানে অন্য কোনো দলের রাজনীতি ও সংগঠন করার অধিকার স্বীকৃত না। তারা এগুলোকে সমর্থন করে না, বিরোধিতা করে। এটা তাদের ঘোষিত নীতি, এখানে কোনো লুকাছাপা নেই। তারা যদি মাদ্রাসায় অন্যদের দল-সংগঠন করার অধিকার স্বীকার করে তাহলে আমিও তাদের রাজনীতি করার অধিকার স্বীকার করবো, তার পক্ষে কথা বলবো। তাহলে ভাই আপনারা যারা কওমি মাদ্রাসায় ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিরোধিতা করছেন, তাহলে সেখানে অন্য কোনো দলের সংগঠন করার অধিকার নেই, সেটা নিয়ে কথা কেন বলছেন না? সেখানে কেন নিরব? সেই বিরোধিতা না করার কারণই তো তাদের জঙ্গিবাদী রাজনৈতিক ভাবাদর্শের শরীরেই পুষ্টি জোগাচ্ছে তাই না? কওমি মাদ্রাসায় রাজনীতি বন্ধের এই সিদ্ধান্ত সরকার দেয়নি। দিয়েছেন কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান কওমি মাদ্রাসা সংক্রান্ত সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তরের সমমানের স্বীকৃতি দিলে দেশের ৬টি কওমি শিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ে এই সংস্থা গঠিত হয়েছে। এবং সরকার একে স্বীকৃতি দিয়েছেন, কারণ সরকারের স্বীকৃতি ছাড়া কওমির সনদ অনুমোদন পাবে না।

সে জন্যই তারা তাদের শর্তেই সরকারের এই অনুমোদন নিয়েছেন। ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আমাদের দেশে একটা মৌসুমী ওয়াজ আছে। যেমন যখনই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে, ক্যাম্পাসে বড় ধরনের সংঘাত, মারামারি ও খুনোখুনি হবে তখনই একশ্রেণির সুশীল নাগরিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলবেন। কিন্তু দেশের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যখন ধর্মীয় অনুভূতির অজুহাতে জ্বালাও পোড়াও করে, সম্পদ নষ্ট করে, ঐতিহ্য ধ্বংস করে, শিল্প-ভাস্কর্য ভাঙে, মানুষ হত্যা করে, তখন তারা কওমি মাদ্রাসার বন্ধের কথা বলেন না, তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলেন না। বিষয়টা কী? এ কেমন আপনাদের একচোখা পক্ষপাতের নীতি, বলবেন কী? দেশের সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশের যেকোনো দুঃসময়ে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। প্রাকৃতিক ও মানবিক বিপর্যয়ে ঝাপিয়ে পরে কওমির ছাত্র-শিক্ষকরা কি সে কাজ কখনো করেছে? ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্রের সংগ্রামে কি তাদের কখনো দেখেছেন? কিন্তু সরকারের শিক্ষানীতি, নারীনীতির বিরোধিতা করে, তারা খেলাধুলা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, মুক্তচিন্তা, গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদির বিরোধিতা করে।

কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক হেফাজতকে অরাজনৈতিক সংগঠন বলা হলেও দুই-তিনজন বাদে এর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সবাই ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস বাংলাদেশের নেতা। তারাই দেশের অধিকাংশ কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক ও শিক্ষক। তারাই রাজনৈতিক কারণে, উদ্দেশ্য-লক্ষ্যে কওমির শিক্ষার্থীদের সে ধারায় শিক্ষা দেন এবং তাদের সকল রাজনৈতিক ও দলীয় কর্মসূচিতে বাধ্যতামুলকভাবে ব্যবহার করেন। তারপরও বলছি, অবস্থা দৃষ্টে বুঝতে পারছি, কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা- সমন্বিত শিক্ষা বোর্ডের একটি কৌশলগত অবস্থান। এটা তাদের কোনো স্থায়ী সুবোধ ও নিরীহ বিষয় নয়। সেটা করতে হলে- তাদের শিক্ষাকাঠামো, সিলেবাসসহ অনেক কিছুরই ব্যাপক পরিবর্তন ও সংস্কার করা দরকার। সে কি হবে? লেখক ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়