ইকবাল আনোয়ার: একজন চিকিৎসক বলছেন, তিনি করোনাকালের এ দেড় বছরের অভিজ্ঞতার কথা, যিনি চৌদ্দ বছর যাবৎ আইসিইউতে চিকিৎসা দিচ্ছেন, এ বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন। তিনি দেখেছেন, সাধারণত আইসিইউতে রোগী গেলে, তার বাঁচা- মরা, কখনো ফিফটি ফিফটি বা কখনো তারও বেশি হারে মৃত্যুর দিকে পাল্লা ঝোলে পড়ে। তবে সেখানেও শান্তি আছে। তার আত্মীয় বন্ধুরা তার কাছে আসেন, মায়া- মমতা পান তিনি, সাহস; যা খুব দরকার- মানসিক ইমমিউনিটি পান তিনি, আধ্যাতিক বাতাবরণে প্রশান্তি পান তিনি, প্রস্তুতি- নিদানের বাগানে থাকার প্রয়াস পান তিনি, ফলে অসহায় বোধ করেন না ততো, কেননা তিনি পৃথিবীর সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন না। তবে অজ্ঞান হলে ভিন্ন অবস্থানে চলে যান। কিন্তু করোনায় চিত্র বড় করুণ। যিনি রোগী, পাড়ি দিচ্ছেন বন্ধুর পথ, তিনিই কেবল জানেন, কী করে প্রতি মুহূর্ত পার হচ্ছে, জীবন-মুত্যু কী জিনিস। যিনি চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন, চিকিৎসক- সেবা কর্মী তো অবশ্যই এবং রোগীর নিকট জন, তারা সকলেই প্রত্যক্ষ করছেন, প্রতি পলে পলে, জগতের নিদারুণ দশা। প্রতিটি দৃশ্যের প্রেক্ষাপট ভিন্নতর করুণতায় মর্মরিত চাকুকের পর চাবুকের মতো। যারা অতি দরকার সত্যেও অক্সিজেন পান না বা ঘন চাপ ও মাত্রায় পান না, তাদের অবস্থা হলো, মাছকে পানি থেকে ডাঙ্গায় তুললে যেমন ছটফট করে বা মানুৃষকে পানিতে চেপে ধরে রাখলে যা হয়, সেই রকম, এ বড় অসহ্য অবস্থা।
যার মুখে অক্সিজেন- মাস্ক লাগানো হয়, তার চোখ দেখে বুঝা যায়, তিনি বুঝতে পেরেছেন, তারপর যখন মাত্রা বাড়তে থাকে, তখন তিনি যা বুঝার তা বুঝে যান, যাকে আইসিইউতে নেওয়া হচ্ছে, ভাগ্যবান তিনি, কেননা বাইরে ছটফট করা অনেকেই রয়েছেন, যাদের অপেক্ষা, একটি সিট যদি, যে কোনো কারণেই, কেউ মরে (বাস্তব, তবে কারো কামনা নয়) হলেও খালি হয়। লম্বা কিউ, আছে ক্ষমতাবানদের তদবীর, তবু সেই বিরল ভাগ্যবানের তখন, মন মরে এমন হয়, যেন তাকে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়া হচ্ছে, এমন সময়ে, তার আদরের পরিবার পরিজনের কেউ নেই পাশে (আসতে বারণ, কেমন করুণ দশা আজ এ নীল গ্রহটির)। এ দিকে টাকা সব শেষ, বন্ধকে চলে গেছে সব, ধার করবে কী, করোনায় প্রায় সবারই যে গাঁটে টান পড়েছে। (আমি কোনো আতঙ্কের কথা বলছি না, জেনে রাখুন, আল্লাহপাক এমন কোনো কষ্টের বোঝা চাপান না, যা বহন করা যাবে না, আল্লাহর ওপর ভরসা করলে, তিনিই যথেষ্ট)। সেই চিকিৎসক; অতিরিক্ত কাজের চাপের মধ্যে, নিজের আক্রান্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা, আর যে সব স্ট্রেইন নিয়ে তার কাজ, এ সব হলো ভয়ানক পদের করোনা, তারপরও নানা রকম..., ফলে তিনি মনে করছেন- যেন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন, শক্তি- মনোবল হারিয়ে ফেলছেন। তার দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছে, প্রায় প্রতি রাতে। সকালে আবার দুঃস্বপ্ন মাড়িয়ে তাকে যেতে হচ্ছে কাজে। তিনি মানুষ। মানুষ বলেই মানুষের দুর্দশায় সকল মানুষের এমন হয়। আমরা সবাই মানুষ।
[১] তবে কতক মানুষ কীভাবে লকডাইন মানেন না? মাস্ক ছাড়া, বাজারে, ঈদ বাজারে যান, যাবেন। এ রকম মানুষ হলেন, সাধারণ মানুষ। তারা বুঝেন না। বুঝতে চান না। তবে তা গ্রহণযোগ্য নয় মোটেও। সাবধান। ভারতের চিত্র দেখুন, সেখানকার হাহাকার শুনুন। আমরা তো ভারতের পেটেই আছি। দয়া করে দেখুন, মানুন, সরকারকে সহায়তা দিন। আইন কিছু হয় না শেষ পর্যন্ত। মানুষকে নৈতিকভাবে মেটিভেটেড হতে। কিছু কঠোরতাও প্রয়োজন। অনেক সভ্য রাষ্ট্রেও মৃদু লাঠির ব্যবহার দেখেছি। তবে আইনের সমভাবে, যৌক্তিকভাবে ও সততার মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে।
[২] যাদের পেটের দায় আছে, বিকল্প নেই। তারা আলাদা। সমাজেও আলাদা (!)
[৩] তবে যারা, কোয়ারেন্টাইন পালন না করে, প্লেন থেকে নেমে ক্ষমতার জোরে বাসায় চলে যান বা যেতে পারেন, করোনায় বরাদ্দ করা টাকা মেরে খান বা খেতে পারেন, যারা করোনা- ব্যবসায় মত্ত, প্রতিদ্বন্দ্বীও রাখবো না, করোনার যা হবার হোক, দেখতে হবে আমার/আমাদের স্বার্থ! এমন ভাবনায় কাজ করে থাকেন- তারা অসাধান (!) মানুষ! তাদের হৃদয় ইস্পাতের। পাদটিকা:- এ অসাধারণ (!); কোনো পার্টিকুলার দেশে কেবল নয়, দেশে দেশে রয়েছে। কতক দেশ এ সবের ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছে; অথচ তারাও করোনা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এ হলো বাস্তবতা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :