আমিনুল ইসলাম: দিন তিনেক আগে টেলিভিশনের টকশো দেখছি। সেখানে দেশের সরকারি হাসপাতালের এক কর্তা কথা বলছেন, গ্লোব-বায়োটেক কোম্পানির একজনের সঙ্গে। আপনাদের জানিয়ে রাখি গ্লোব-বায়োটেক হচ্ছে সেই বাংলাদেশি কোম্পানি যারা দেশে ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। উনারা দ্বিতীয় ধাপ শেষে তৃতীয় ধাপ; অর্থাৎ মানব শরীরে ট্রায়ালের অনুমদনের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করছেন।
বেশ কয়েক মাস আগে উনারা সরকারের আছে আবেদন করেছে অনুমতি পাওয়ার জন্য। কিন্তু কোনোভাবেই পাচ্ছিলো না। তো গ্লোব-বায়োটেকের ওই ভদ্রলোক এই টকশোতে বলেছেন, আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না, কেন আমাদের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আমরা তো সকল রকম নিয়ম মেনেই সব কিছু করেছি। এরপর তিনি বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে রেফারেন্সও দিয়েছেন। এই সব সায়েন্টিফিক বিষয় এই লেখাতে তুলে না ধরলেও চলবে। তিনি যেটা মূলত বলতে চেয়েছেন, সেটা হচ্ছে- আমরা কোনোভাবেই বুঝতে পারছি না; কেন আমাদের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না!
এরপর সরকারি ওই কর্তা তার পক্ষে নানান যুক্তি তুলে ধরেছেন- কেন আসলে দেওয়া হচ্ছে না। এই যেমন- মাত্র ৮টা ইঁদুর কিংবা ১৬টা ইঁদুরের ওপর গবেষণা করেছে গ্লোব। এতো কম ইঁদুরের উপর গবেষণা করে মানব শরীরে চলে গেলে সেটা অনৈতিক হবে ইত্যাদি। যদিও গ্লোব-বায়োটেকের ওই ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে বলেছেন, আমরা ৫৬টা ইঁদুরের উপর গবেষণা করেছি। এরপর সরকারি ওই কর্তা বলেছেন- মাত্র ৫৬টা! এখন আপনারাই বলেন- এর ওপর ভিত্তি করে মানব শরীরে গবেষণা করার অনুমদন কি দেয়া যায়?
গ্লোব-বায়টেকের ওই ভদ্রলোক এইবার বলেছেন, এই স্যাম্পল সাইজ তো বিদেশের নামকরা বিজ্ঞানীরা গ্রহণ করছে। তিনি এরপর রেফারেন্সও দিয়েছেন। যা হোক, এই ঘটনা দিন তিনেক আগের। তখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল না- ভারত কি সত্যি সত্যি বাংলাদেশকে ভ্যাক্সিন দেয়া বন্ধ করে দিচ্ছে কিনা। যদিও এই নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। কারণ আগের চালান আসেনি। এছাড়া সেরাম ইন্সটিটিউট, যেখান থেকে বাংলাদেশে ভ্যাক্সিন আসছে- তারাও বলেছিল- ভারতীয় সরকারের অনুমতি ছাড়া ভ্যাক্সিন তারা পাঠাতে পারছে না। তোমরা সরকারের অনুমতি নেয়ার চেষ্টা করো।
এরপর বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় দুতাবাস দিন দুয়েক আগে বলেছিল, বাংলাদেশের ভ্যাক্সিন পেতে সমস্যা হবে না। বাংলাদেশ এই নিয়ে ভারত সরকারকে লিখিত চিঠিও দিয়েছিল। কিন্তু ভারত সরকার পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, তারা এখন টিকা কোনোভাবেই বিদেশে পাঠাবে না। এই খবর পাওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পর জানতে পারলাম, এক সপ্তাহের মাঝেই গ্লোব-বায়োটেককে নাকি মানব শরীরে গবেষণার অনুমদন দেয়া হবে। তাহলে এতোদিন কেন দেয়া হলো না? দুই দিনে গ্লোব-বায়োটেক কী এমন করলো যে- তাদের এখন অনুমতি দেয়া হচ্ছে? এই প্রশ্ন যেহেতু আমার মাঝে এসেছে; নিশ্চয়ই দেশের কোটি মানুষের মনে এই প্রশ্ন আসবে। আপনাদের এর উত্তর দিতেই হবে। ফেসবুক থেকে