শামীম আজাদ: মানুষ চিহ্নিত হয় তার ব্যতিক্রমী আচারে। সড়ক চেনা যায় কিলোমিটার ফলকে। শহর চিহ্নিত হয় এর কুতুবে ও কুকুরে। আর একটি দেশের ছায়া থেকে আরেকটি দেশের ছায়া আলাদা করা যায় তার স্বভাবে, সম্পদে, ভৌগলিক অবস্থানে, আকারে, পরিবেশ-প্রকৃতিতে এবং দেশের মানুষের অবদান ও সংবেদে। প্রকৃতির র্নিযাতন বা অনুগ্রহ পেয়ে কীভাবে দেশটি দাঁড়াচ্ছে তা দেখেও সে দেশটিকে সনাক্ত করে লোকে। তাতে সে দেশের নিজস্ব ভূমিকা না থাকলেই বা কী, তবুও প্রকৃতির আছরে দেশটির যে আদল হয়েছে তাতেই হয় সে দেশ ব্রান্ডেড। যেমন বাংলাদেশ বহুকাল চিহ্নিত ছিলো ‘বন্যায় ডোবা দেশ হিসেবে, ইথিওপিয়া ‘ক্ষুধার দেশ’ আর আমেরিকা ‘প্রাচুর্যের’ ভূখণ্ড বলে। কিন্তু কী অভাবনীয় কাণ্ড ঘটালো এবারের এই ভাইরাস! কোভিড ১৯ নামের এ বিষাক্ত ভাইরাস পৃথিবীর শক্তি ও সামর্থ্যরে সূচক পাল্টে দিয়েছে।
কিছু কিছু দেশের প্রচলিত ভাবমূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে। সুন্দর ও স্বচ্ছ নেতৃত্বের কারণে নিউজিল্যান্ড হয়ে উঠেছে দেশ-মানের নতুন সূচক। তবে একটি দেশের চারিত্রিক স্খলন অথবা প্রচার উল্লম্ফণেও তার চিহ্নায়ন হয়। এই করোনাকালে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি চিহ্নিত হতে চলেছে চাল চুরি গার্মেন্টস শ্রমিকদেরকে অচিন্তনীয়ভাবে দুর্ভোগে, কোভিডের জন্য আইসিইউতে জায়গা না দিতে পারা, অক্সিজেন সিলিন্ডার চুরি, লক ডাউন ও চাকরিহীনতার সময়ে খাবারের দাম দ্বিগুণ ত্রিগুণ করায়, উৎসব বিবাহ পিকনিক জনসমাগম ও উদ্যাপনে।
চিহ্নায়ন চলে দেশের শিল্প, সাহিত্য, বিশ্বাস, চিত্রকলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে এবং সে দেশের মানচিত্রের বাইরে থাকা মানুষের আচার আচরণে। দেশের মানুষ তাদের রাজনৈতিক অভিব্যক্তিতে ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে বারবার তার বির্নিমাণ করতে পারে। কিন্তু অব্যাহত ও অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকার কারণে রাজনৈতিক নেতা-নেতৃরা তা গুলিয়ে ফেলেন, বিভ্রান্ত হন, আত্মপ্রেমে দেশ প্রেম ভোলেন। শুধু আত্মপ্রেম ও ক্ষমতা আকাক্সক্ষার কারণে আমাদের দেশ বদলে গেছে বা যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে আমাদের পরিচিতি। নীতি ও মানবতার দীক্ষা বা শিক্ষা দেবার জন্য যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এর সৃষ্টি আজ তা হয়েছে ক্ষমতা আয়ত্বের প্রতিষ্ঠান। করোনার মতো ভয়াবহ রোগকেও কাজে লাগিয়ে লাখ লাখ মানুষকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিলেও রাষ্ট্রকর্তৃক তা বন্ধ করা সম্ভব হয় না। কোনো সমন্বিত শিক্ষা কারিকুলাম না থাকায় ধর্মের দোহাই দেওয়া এসব দল হয়ে গেছে শুধু রাজনীতির চক্র।
আর ক্ষমতাসীনরা ভোট জয়ের রাজনীতিতে নিজেদের পরাজয়ের পথ সুনিশ্চিত করে এই পশ্চাৎপদ কার্যক্রমকে এগোতে দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচিত করে তুলছে এক অকেজো দেশ হিসেবে। দুঃসময় ব্যাক্তি, সমষ্ঠি, দলের মতই পথ হারানো দেশকেও সুযোগ এনে দেয়। যেমন দিয়েছিলো একাত্তরে। এবার করোনার সুযোগে সকল কূপমন্ডকতাকে ঝেড়ে দেশকে শুদ্ধ করার সুযোগ এসেছে। বাংলাদেশের মানুষ ও রাষ্ট্র তা নেবে কী? লন্ডন। ২১.৪.২০। এক বছর পরেও দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করি তা আরও বেশি প্রযোজ্য। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে আরও এক বছর পিছিয়েছি। সামান্য পরিবর্তন করে আবার তা দিলাম। লন্ডন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :