আহসান হাবিব: যারা অকম্মার ঢেকি, কায়িক পরিশ্রম বিমুখ, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যারা সরাসরি যুক্ত নয়, তারা বিদায় নেবে। থাকবে নির্মেদ শ্রমিক এবং তার একনায়কত্বে পরিচালিত পৃথিবী। তাদের থাকবে নিজস্ব বিজ্ঞান, প্রকৃতির সঙ্গে যাদের থাকবে ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক সিমবায়োটিক সম্পর্ক। তারা প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে প্রকৃতিকে ফুলের টোকা না দিয়ে। তারা পরিশ্রমবিমুখ মানুষদের অযোগ্য ঘোষণা করবে। তারা আবিষ্কার করবে এমনকিছু, যা দিয়ে একদা কায়িক পরিশ্রমকে বিদেয় জানাবে, তখন তারা তাদের শরীরকে রোগমুক্ত রাখবে যাদুকরী প্রযুক্তি দিয়ে। তারা মৌলিক চাহিদার জন্য বিনিয়োগ করবে না কোনো সেকেন্ড, তারা মেতে থাকবে আনন্দে এবং নব নব আবিষ্কারে। শ্রেণি দ্বন্দ্ব মিলিয়ে যাবে, প্রকৃতির সঙ্গে তার সম্পর্ক হবে না বৈরিমূলক, তারা পরস্পরকে আক্রমণ করবে না। রোগ তখন যাদুঘরে জায়গা নেবে। মৃত্যু ঐচ্ছিক হয়ে উঠবে। কিন্তু তার আগের কাজটুকু করবে প্রকৃতি। সেই কাজের অংশ হিসেবে চলছে অকম্মা ক্লিঞ্জিং। এই ক্লিঞ্জিংয়ের রোষানলে আমিও আছি।
কারণ হচ্ছে তারা এখন পর্যন্ত প্রকৃতির ওপর শুধু অত্যাচার করে এসেছে। এই কায়িক পরিশ্রমী শ্রেণির এখন পুষ্টির ঘাটতি আছে, এই ঘাটতির জন্য ওই অকম্মা ঢেকি যারা এনিহাউ লুটপাট করে সম্পদ কুক্ষিগত করেছে, পৃথিবী হয়ে পড়েছে অসম, বৈরিতা তাদের প্রধান দ্বন্দ্ব, ফলে এটাকে ঠিক রাখার দায়িত্ব সে পালন করে আসছে। রোগ, শোক, জরা তাদের নিত্যসঙ্গী। তারা শুধু এই রোগ-বালাইয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড ব্যয় করছে। তাদের সিংহভাগ প্রযুক্তি রোগের বিরুদ্ধে পরিচালিত। অথচ পুষ্টির ঘাটতি সত্ত্বেও শ্রমিকরা বহাল তবিয়তে টিকে আছে। এই টিকে থাকা শ্রমিকগণ অচিরেই উৎপাদনের সব হাল হাতিয়ার নিজেদের দখলে নেবে এবং ক্রমে তার কাজটি করতে শুরু করবে। উৎপাদন যেমন হবে সামাজিক, ভোগও হবে সামাজিক, এখন যা ব্যক্তিক। এই ব্যক্তিক হওয়াটাই সব নষ্টের গোড়া। প্রকৃতি ধ্বংস, প্রাণী ধ্বংস, অনুজীব ধ্বংস, জলবায়ু দূষণ ইত্যাদি সে ঘটিয়ে চলেছে।
এর বিরুদ্ধে প্রকৃতি রুখে দাঁড়িয়েছে। সে এখন ছাঁকতে ব্যস্ত। ছাঁকনির উপরে বাঘা বাঘা বোয়ালরা ধরা পড়ে যাচ্ছে আর নীচে পড়ছে নির্মেদ শ্রমিকগণ। এমন পৃথিবীর দেখা কবে পাবো? জানি না, তবে বিবর্তনের গতিমুখ সেদিকেই ধাবিত এবং তাকে তরান্বিত করতে কাজ থেমে নেই। এই কাজ, সবাই জানেন, একটু মন্থর। পৃথিবীর কোথাও কোথাও সেই লক্ষ্যে চলছে সেই কর্মযজ্ঞ। তাদের বিরুদ্ধে শেষ লড়াইটা লড়ার চেষ্টা করছে মুমূর্ষু ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারকেরা, কিন্তু পরাজয় অনিবার্য। এই পরাজয় সাধনে শুধু শ্রমিক নয়, প্রকৃতিও হাত লাগিয়েছে। লকডাউন, রেমডিসিভির, ইভারমেকটিন, আইসিইউ, অক্সিজেন, মাস্ক, স্যানিটাইজার, ভ্যাক্সিন আর কতোটুকুইবা ঠেকাবে হে? লেখক : উপন্যাসিক