রুমি আহম্মেদ: আবারো চিকিৎসা সংক্রান্ত অনেক প্রশ্ন অনুরোধ পাচ্ছি নিয়মিত|
একটা সংক্ষিপ্ত প্রাইমার দেই পশ্চিমা দেশগুলোতে কি কি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে|
1. প্রথমত যার অক্সিজেন লেভেল ভালো আছে - মানে রুম এয়ার এ ৯৪ % এর উপরে থাকলে কোনো ঔষধ খাবার দরকার নাই! হাসপাতালে ভর্তি হবার দরকার নাই!
2. একটা কাজ করবেন এই সময়টাতে - দিনে দুবার করে ছয় মিনিট হাঁটার শেষ পর্যায়ে অক্সিজেন লেভেল মাপুন ও দেখুন অক্সিজেন লেভেল ড্রপ করছে কিনা!
3. অক্সিজেন লেভেল রেস্ট এ অথবা এক্সারসাইজ এ ড্রপ করলে স্টেরোয়েড ট্যাবলেট শুরু করতে হবে ডাক্তার এর পরামর্শে! স্টেরোয়েড গ্রূপ এ ডেক্সামিথাসন (ওরাডেকসন) ট্যাবলেট ছয় মিগ্রা ভরা পেটে দিনে একবার দশদিনের জন্য! অল্টারনেটিভলি প্রেডনিসোলোন ক্যাপসুল / ট্যাবলেট ৪০ মিগ্রা ভরা পেতে দিনে একবার খাওয়া যেতে পারে দশদিনের জন্য|
4. অসুখ শুরু হবার প্রথম সাত দিনের মধ্যে হলে remdesivir ইনজেকশন ব্যবহার করা যায়| অনেক রিসার্চে এর কোন কার্যকারিতা প্রমাণিত হয় নাই - একটা রিসার্চে এ বলা হয়েছে remdesivir ব্যবহার করলে অনেক রুগী হাসপাতালে থেকে আগে ছাড়া পেতে পারেন, তবে স্টেরয়েড এর মতো remdesivir মৃত্যুর হার কমাতে পারে না! WHO গাইডলাইনে Remdesivir রিকমেন্ড করা হয় নাই!
5. যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং যাদের অক্সিজেন লেভেল খুব দ্রুত ড্রপ করছে ও সিআরপি খুব হাই হয়ে যাচ্ছে - স্টেরয়েড এর সাথে একমাত্র এক ডোজ টোসিলিজুম্যাব দেয়া যেতে পারে বিশেষায়িত হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্বাবধানে! টোসিলিজুম্যাব না পাওয়া গেলে ব্যারিসিটিনিমাব কার্যকর হতে পারে| তবে ব্যারিসিটিনিমাব নিয়ে এখন পর্যন্ত বড় ট্রায়াল নাই! তবে ব্যারিসিটিনিমাব নিয়ে আমি আশাবাদী!
6. সিটি স্ক্যান বা ভি কিউ স্ক্যান প্রমাণিত ব্লাড ক্লট না থাকলে ট্রিটমেন্ট ডোজ এর এন্টিকোয়াগুলেশন / ব্লাড থিনার এর কোনো ব্যবহার / কার্যকারিতা নেই! হাসপাতালে ভর্তি রুগিদের ক্ষেত্রে প্রিভেন্টিভ ডোজের এন্টিকোয়াগুলেশন দেয়া বিজ্ঞানসিদ্ধ | প্রিভেন্টিভ ডোজ হচ্ছে Clexane ৪০ (চল্লিশ) মিগ্রা দিনে একবার করে যদি কিডনি ফ্যাংশন সম্পূর্ণ নরমাল থাকে! কিডনি ফ্যাংশন / ল্যাব টেস্ট সামান্য এবনরমাল হলেও Clexane এর ডোজ এডজাষ্টমেট লাগে, তাই এটার বদলে তখন হেপারিন দিতে হবে ৫০০০ মিগ্রা করে দিনে দু-তিন বার| কেউ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিলে এই ব্লাড থিনার এর কোনো প্রয়োজন নাই! যেই চিকিৎসক রা একাজটা করছেন - দয়া করে এটা বন্ধ করুন| ব্লাড ক্লট প্রিভেন্ট করার জন্য একটিভ থাকা ও নিয়ম করে হাঁটা চলা করা খুব জরুরি!
7. কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা নিয়ে অনেক কন্ট্রোভার্সি হচ্ছে - এটার কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে! বাংলাদেশের রিয়েলিটিতে যেখানে এন্টিবডি টাইটার এভেইলেবল না - সেই পরিস্থিতিতে কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা ইউজ না করাই ভালো! আমি এটা আর ইউজ করি না|
8. এর বাইরে স্ক্যাবো, জিঙ্ক, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি ইত্যাদি এগুলোর কোনোটাই প্রমানিত না| যুক্তরাষ্ট্রের / যুক্তরাজ্যের কোনো বড় হাসপাতালে এগুলো ইউজ হয় না| গত এক বছর হাজার হাজার কোভিড রুগীর চিকিৎসা করেছি এবং কাউকেই এই ঔষধ গুলো প্রেসক্রাইব করি নাই!
9. হাসপাতালে রুগীর অবস্হা খারাপ হয়ে গেলে ভেন্টিলেটর এ দেয়া যত দেরি করা যায় তত ভালো! একথাটার মানে হচ্ছে - যতদিন রুগী টলারেট করে - হাই ফ্লো অক্সিজেন বা বাইপ্যাপ দিয়ে রাখুন! ইনটিউবেট তখনি করবেন যখন বাইপ্যাপ দিয়ে আর চলছে না!
10. হাসপাতালে ভর্তি রুগীর জ্বর আসলে অথবা WBC কাউন্ট বেড়ে গেলে তখনই এন্টিবায়োটিক দেবার কথা ভাব উচিত - এক আগে না!
11. আইসিইউ তে ARDS হয়ে গেলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞর তত্বাবধানে ARDS এর স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসা দেয়া ছাড়াও তিন দিনের জন্য হাইয়ার ডোজের (২০ মিগ্রা তিন দিন) স্টেরোয়েড দেয়া যেতে পারে!
12. প্রাইভেট রুম ছাড়া ও নেগেটীভ এয়ার ফ্লো রুম ছাড়া নেবুলাইজার বা বাইপ্যাপ ইত্যাদি ব্যবহার করা সেফ না!
13. কোভিড হলেই চেষ্ট সিটি স্ক্যান করার কোন প্রয়োজন নাই| চেষ্ট সিটি স্ক্যান তখনই করতে হবে যখন পালমোনারি এম্বোলিজম ( জমাট বাধা রক্ত) সন্দেহ হবে! তবে এক্ষেত্রে সিকন্ট্রাষ্ট টি এনজিওগ্রাম করতে হয় যা তেমন করা হয় বলে মনে হয় না! এছাড়া কোভিড হলেই পয়সা খরচ করে চেষ্ট সিটি স্ক্যান করার প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে!
14. নিয়ম করে মুড়ি মুড়কি এক দরের মতো - সবাইকেই সিআরপি ফেরিটিন ও ডিডাইমার করতে পাঠানোর দরকার নাই! সিআরপি করা যেতে পারে সাইটোকাইন স্টর্ম সন্দেহ করলে (রুগীর খুব দ্রুত অবনতি হতে থাকলে) - টোসিলিজুম্যাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য!
15. সবচেয়ে বড় কথা - হাসপাতালে যত কম ভর্তি করানো যায় - অক্সিজেন প্রয়োজন ছাড়া - ততই ভালো - একজন অক্সিজেন প্রয়োজন ২ লিটার এ নেমে আসলে অক্সিজেন ট্যাংক দিয়ে বাড়ি ছেড়ে দিন!
আপনার মতামত লিখুন :