জাহিদুর রহমান: ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে রিসার্চগেইট জার্নালে প্রকাশিত Critical Care Bed Capacity in Asian Countries and Regions নামক গবেষণাপত্র অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য আইসিইউ বেড সংখ্যা মাত্র ০.৭টি। সেই হিসেবে সারা দেশে মোট আইসিইউ বেড হয় সর্বোচ্চ ১২০০টি, যেটি এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। অন্য দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত আইসিইউ বেড সংখ্যা মাত্র ৫৭৮টি। করোনা প্যান্ডেমিকের ১ বছর পরও আমরা ১৬ কোটি মানুষের জন্য ১০০০ আই সি ইউ বেড তৈরি করতে পারিনি। অথচ স্বাস্থ্য খাতে এই মহামারি মোকাবেলা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এই ব্যর্থতার দায় কার? কারা প্রতি বছর সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ বেড তৈরির টাকাগুলো হজম করে ফেলেছে? নাকি বলবেন আইসিইউ বেড তৈরির জন্য সরকার কোন বরাদ্দই দেয়নি? সুতরাং নীতি নির্ধারকদের
প্রতি সবিনয়ে অনুরোধ সব দোষ, সব দায়িত্ব, সব শর্ত জনগণের ওপর চাপিয়ে না দিয়ে নিজেদের কাজগুলো ঠিকঠাক মতো করেন। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অর্জন কম না। কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাওয়ার পথে মাত্র ১২০০ আইসিইউ বেড? এটি খুব লজ্জা ও ব্যর্থতার পরিসংখ্যান। গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি অনুরোধ, সারাদিন শুধু আইসিইউ বেড খালি নাই বলে বিলাপ না করে, কোন হাসপাতালে কয়টা বেড আছে আগে সেটা জানেন। কেন নাই, সেটির উত্তর খুঁজেন। ৫৭৮ টি আইসিইউ বেড ভর্তি হয়ে যেতে কি খুব বেশি সময় লাগে? মানুষকে শুধু বেড খালি নাই বললে তো হবে না, কোন কোন কারণে খালি নেই সেটাও জানাতে হবে। আবেগের চেয়ে তথ্যকে গুরুত্ব দেন। আর সব শেষে সাধারণ মানুষ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি অনুরোধ, আপনার বা আপনার পরিবারের কারো করোনা হলে আইসিইউ বেড পাওয়ার আশা বাদ দেন। কেন পাবেন না, সেটা উপরেই বলা হয়েছে। আর পেলেও লাভ নেই।
বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশের আই সি ইউতে গেলেও সেই অবস্থা থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। সত্যিকার অর্থে আই সি ইউ সাপোর্ট প্রয়োজন, এমন ১০০ করোনা আক্রান্ত রোগী আইসিইউতে প্রবেশ করলে তাদের মধ্য থেকে বড় জোর ১৫-২০% রোগী প্রাণে বেচেঁ যান। একে তো বেড নাই, তার ওপর আবার বেডে গেলে ফিরে আসার সম্ভাবনাও কম। সুতরাং বাঁচতে চাইলে আইসিইউ বেড পর্যন্ত যাতে নিজের যেতে না হয়, সেসব কাজ করেন। টিকা গ্রহণ করুন, মাস্ক ব্যবহার করুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সামনে যে কি পরিস্থিতি আসছে, সেটি কল্পনাও করতে পারবেন না। আমরা যে দিনের পর দিন বলে যাচ্ছি যে করোনা কয়েক বছরের মধ্যে যাবে না, এর বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর কোন ড্রাগ বা ভ্যাকসিন নিকট ভবিষ্যতে আবিষ্কার হবে না, এই ভাইরাস রূপ বদলে আরো ভয়ংকর এবং ভ্যাকসিন স্কেপ করতে পারে, ইত্যাদি কথাগুলো নিজে থেকে বানিয়ে বলি না। যাদের যে বিষয়ে পড়াশুনা এবং অভিজ্ঞতা, তাদের কথা আপনার আজ হোক, কাল হোক শুনতেই হবে। ফেসবুক থেকে শাহিন
আপনার মতামত লিখুন :