ডেস্ক রিপোর্ট: মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলকে গত ৮ জানুয়ারি চার বছর সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন কুয়েতের একটি আদালত। এই রায়ের কপি বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় সংবিধান মোতাবেক তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন আইনজ্ঞরা। সময়ের আলো
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (১) (ঘ) ধারায় বলা হয়েছে ‘তিনি (কোনো সংসদ সদস্য) নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া কমপক্ষে যদি দুই বৎসরের কারাদন্ডের দন্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে তা হলে তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হইবে।’
একই ধারার (ঙ)-তে বলা আছে ‘তিনি (কোনো সংসদ সদস্য) ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন যেকোনো অপরাধের জন্য দন্ডিত হইয়া থাকলে তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হইবে।’ এমপি পাপুলের যেহেতু দুই বছরেরও বেশি অর্থাৎ চার বছর সশ্রম কারাদন্ড হয়েছে তাই সংবিধান মোতাবেক তার সংসদ সদস্যপদ থাকছে না বলে জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা।
তাদের মতে, সংবিধানের কোথাও বলা নেই যে, শুধু দেশে সাজা হলেই সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে। তাই পৃথিবীর যে দেশেই বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যের দুই বছরের বেশি সাজা হোক, তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, ‘সংবিধান মোতাবেক এমপি পাপুলের সংসদ সদস্যপদ অবশ্যই বাতিল হয়ে যাবে। কারণ দেশে হোক বা বিদেশে (কুয়েত), দুই বছরের বেশি সাজা হলেই এমপি পদ বাতিল হওয়ার বিধান আছে সংবিধানে। আর পাপুলের তো হয়েছে চার বছরের সশ্রম কারাদন্ড। এ অবস্থায় কোনোভাবেই তার সংসদ সদস্যপদ থাকতে পারে না। হয়তো শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।’
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘কুয়েতে চার বছরের সশ্রম কারাদন্ড হওয়ায় সংবিধান মোতাবেক এমপি পাপুলের সংসদ সদস্যপদ বাতিল হওয়ার কথা। আমি এখনও রায়টি দেখিনি। সবকিছু বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল সময়ের আলোকে বলেন, ‘দেশে বা বিদেশে যেখানেই বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যের সাজা হোক তার সংসদ সদস্যপদ কিছুতেই থাকে না। কারণ বিষয়টি সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যেহেতু রায়টি বাংলাদেশে এসেও পড়েছে, তাই দ্রুত এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’
এদিকে সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের রায় জাতীয় সংসদ কর্তৃপক্ষ পর্যালোচনা শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘কুয়েতের আদালতের রায়ের কপি বৃহস্পতিবার সংসদে পৌঁছেছে। এটা পর্যালোচনা করে সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘কুয়েতে এমপি পাপুলের চার বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়েছে। কুয়েত সরকার থেকে আমরা পাপুলের রায়ের সেই কপি পেয়েছি। এটা ৬১ পৃষ্ঠার রায়। এই রায়ের কপি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদকে দিয়েছি।’
অন্যদিকে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর একটানা ৯০ কার্যদিবস সংসদের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলেও এমপি পাপুলের সদস্যপদ চলে যাবে। কিন্তু বিধি মোতাবেক সাজা যদি দুই বছরের কম হতো এবং স্পিকার যদি তার সংসদে অনুপস্থিতির বিষয়টি অবহিত থাকেন, তা হলে তার সদস্যপদ যেত না। পাপুলের যেহেতু চার বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়েছে সেক্ষেত্রে এই ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিতির বিষয়টি দেখারও প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন আইনজ্ঞরা।
গত ৮ জানুয়ারি কুয়েতের ফৌজদারি আদালত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলকে চার বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ১৯ লাখ কুয়েতি রিয়াল (৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা) জরিমানা করা হয়। কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওথমান পাপুলের সঙ্গে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জারাহকেও চার বছরের কারাদÐ ও ১৯ লাখ কুয়েতি রিয়াল জরিমানা করেন। মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গত বছর ৬ জুন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করে কুয়েতের পুলিশ। তিনি তারপর থেকেই সে দেশের কারাগারে আটক ছিলেন। ৬ মাস বিচার প্রক্রিয়া শেষে তাকে ওই সাজা দেওয়া হয়।
অন্যদিকে নির্বাচনি হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্যপদ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট চলমান আছে। গত ১৬ আগস্ট রিটটি করেছেন স্থানীয় ভোটার আবুল ফয়েজ ভ‚ঁইয়া। অন্যদিকে সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলের দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে জানিয়েছিলেন, দুই দেশের নাগরিক হলে পাপুলের সদস্যপদ বাতিল হবে। অবশ্য এর পরপরই কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পাপুল তাদের দেশের নাগরিক নন।
আপনার মতামত লিখুন :