কামরুল হাসান মামুন : আবার আমার এক ছাত্র আমেরিকা থেকে ফোন করলো আর ওখানাকর পড়াশোনার সিস্টেমের ভ‚য়সী প্রশংসা করছিলো। ওই সিস্টেমের কারণে ওখানে গিয়ে অনেক কিছু শিখতে পারছে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় বলতে তেমন কিছুই শিখেনি। বললাম সিস্টেমটা কী? ওখানে অনেক প্রব্লেম করায়, প্রচুর প্রব্লেম সলভিং পরীক্ষা বা টেস্ট নেয়। বললাম, ওখানে মাস্টার্সে একেক কোর্সে ছাত্র কজন? বড়জোড় ১৫ জন। আমাদের এখানে মাস্টার্সে ছাত্র সংখ্যা ৮০ থেকে ১০০ জনও হতে পারে। ১৫ জনের খাতা দেখা আর ১০০ জনের খাতা দেখার মধ্যে পার্থক্য আছে। সপ্তাহে দুইটা পরিক্ষা নিলে খাতা দেখেই শেষ করা যাবে না।
অন্য কাজ হবে কীভাবে? ওইসব টেস্ট পরিক্ষার খাতা কারা দেখে? আবার সেই একই প্রশ্ন। তোমাদের ওই শিক্ষকরা কি আন্ডারগ্রাজুয়েট ল্যাবে ল্যাব ক্লাসে বসে থাকে? ওইসব ল্যাব চালায় পিএইচডি করতে যাওয়া ছাত্ররা যারা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে ওই কাজের বিনিময়ে টাকা পায়। প্রব্লেম সলভিং ক্লাসও অনেক ক্ষেত্রে তারাই নেয়। টেস্টের খাতাও তারাই দেখে। তাতে মূল শিক্ষকের অনেক সময় বেঁচে যায়। সেই বেঁচে যাওয়া সময় শিক্ষক গবেষণা, ছাত্র সুপারভিশন, প্রশ্ন করা ইত্যাদি আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যয় করতে পারে।
এসব কাজ টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট দিয়ে করানো যায় না। এই অতিরিক্ত বেঁচে যাওয়া সময় তারা মান সম্পন্ন প্রশ্ন করতে ব্যয় করতে পারে। তখন বলল তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে ছাত্রদের নিয়োগ দিয়ে এইসব কাজ কেন করায় না? আমি বললাম আমাদের শিক্ষকরাই শিক্ষকদের বিশ্বাস করি না। এখানে আমার কোর্সের পরিক্ষার খাতা আমাকে দিয়ে দেখিয়ে সেটা আবার একজন এক্সটার্নালকে দিয়ে দেখিয়ে ভেরিফাই করানো হয়। আমার প্রশ্নের পাশাপাশি একজন এক্সটার্নাল প্রশ্নও নেওয়া হয়।
সেখানে ছাত্রদের দিয়ে খাতা দেখানো কি সম্ভব? তখন বলবে টিচিং এসিস্টেন্ট ছাত্ররা রাজনৈতিক অথবা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কাউকে অতিরিক্ত কম আর কাউকে অতিরিক্ত বেশি নম্বর দিয়ে দিবে। ছাত্র দ্বারা শিক্ষক মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও আমরা বলি ছাত্ররা নিজ দলের শিক্ষকদের একভাবে মূল্যায়ন করবে আর বিরোধী দলের শিক্ষকদের অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে। তাহলে কি দাঁড়ালো? সকল সমস্যার মূল হলো ছাত্রশিক্ষকের দলান্ধতা। পৃথিবীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এতো দলান্ধতা আর কোথাও নাই। এই দলান্ধতার কারণে কোনো ভালো সিস্টেম চালু করা সম্ভব না।
ফলে শিক্ষার মানের উন্নতি সুদূর পরাহতই থেকে যাবে। রাজনৈতিকভাবে সচেতন বা কোনো একটি দলের আদর্শের রাজনীতি করা আর দলান্ধতার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। আমাদের ছাত্র শিক্ষকরা রাজনীতি করতে গিয়ে এক্সট্রিমিস্ট হয়ে যায়। ছাত্র শিক্ষকের মাঝে যারা দলান্ধতা ইঞ্জেক্ট করছে তারা দেশের শত্রু। পিরিয়ড। ফেসবুক থেকে