হাসান শান্তনু : বিদেশি সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে আলোচিত, সমালোচিত যেসব প্রতিবেদন হয়েছে, স্বপ্রণোদিত হয়ে সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই করেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। রাজনৈতিকগোষ্ঠীর মোটা অংকের টাকা পেয়ে সেগুলো করে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে ইকোনোমিস্ট, আল-জাজিরার মতো সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিলে চুক্তিকর্তারা যা বলেন, সেসব তথ্য দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো টাকা খাওয়া প্রতিবেদন লিখে ‘অনুসন্ধানী’ বলে চালিয়ে দেয়।
বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে চুক্তিতে ইতিবাচক প্রতিবেদন হলে টাকা তুলনামূলক কম লাগে। নেতিবাচক প্রতিবেদন হলে টাকার পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি। এমনকি কোনো দেশের সরকার ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করলে আর সেই দেশের আদালতে মামলা হলে বা মামলা লড়তে হলে যে টাকার প্রয়োজন, সেটা আগেভাগে নিয়েই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আল-জাজিরার মতো সংবাদপ্রতিষ্ঠানগুলো।
বিদেশি কিছু প্রচারমাধ্যম, সেগুলোতে কর্মরত অনেক সাংবাদিকও মারাত্মক অসৎ। একাত্তরে এদেশে পাকিদের গণহত্যা, ধর্ষণ, নৃশংসতা চলাকালেও মধ্যপ্রাচ্যের আমির তাহেরির মতো উন্মাদ সাংবাদিকরা পাকিস্তানি মদ গিলে ইয়াহিয়া, টিক্কাদের পক্ষে লিখেছিলেন।
আমাদের দেশের রাজনীতিপাড়ার প্রসঙ্গ নিয়ে চুক্তি করে বিদেশি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করানোর বিষয়টি প্রথম বেশি আলোচনায় আসে ‘নারী, গোলাপ বিষয়ক কবি, অন্যের বউয়ের মজনু’ হিসেবে খ্যাত প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের আমলে। যুক্তরাজ্যের এক পত্রিকায় তার অনেক নারীর সঙ্গে ‘দৈহিক প্রেমের’ কাহিনি ছাপা হয়। এরশাদের পতনের পর জানা যায়, তারই মন্ত্রিসভার এক সদস্য প্রতিবেদনটি টাকা খরচ করে করিয়েছিলেন নিজের সংসার টেকাতে। কারণ তার কলেমা পড়া বউয়ের দিকেও নাকি এরশাদের পরকীয়ার চোখ পড়েছিলো।
আল-জাজিরা টিভি চ্যানেল ‘ইসলাম ইসলাম’ করে। ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের আমলে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে সাংবাদিকতার যে রূপ দেখায় চ্যানেলটি, তা ইতিহাসে নিন্দিত হয়েই থাকবে। আল-জাজিরার মতো পুঁজিবাদী প্রচারমাধ্যমগুলোর তথাকথিত সাংবাদিকতার জন্য তখন ‘এমবেডেড জার্নালিজম’ শব্দগুলোর জন্ম হয়।
অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ‘এমবেডেড জার্নালিজম’ শব্দগুলোর বাংলায় রূপান্তর করে বলেছিলেন- ‘শয্যা সাংবাদিকতা’। মুখে ধর্মের কথা বললেও যাত্রা থেকেই আল জাজিরার শয্যা দখলদার ইসরায়েল, ইহুদিদের সঙ্গেই। চ্যানেলটি সবশেষ আলোচিত, সমালোচিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি কতো টাকার বিনিময়ে করেছে, এ প্রশ্ন খুবই যুক্তিসঙ্গত। ফেসবুক থেকে