আহসান হাবিব : আমরা যদি সমাজ বিকাশের বিভিন্ন স্তরগুলো দেখি, দেখবো উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রমের বৈশিষ্ট্য পুরুষ এবং নারীর অবস্থানকে বৈষম্যমূলক করেছে। আদিম সমাজ থেকে সামন্তবাদী ব্যবস্থায় পুরুষ তার জৈবিক পার্থক্যকে কাজে লাগিয়ে নারীর উপর আধিপত্য কায়েম করেছে। এই পার্থক্য নির্মাণে দুটি বিষয় ভূমিকা নিয়েছে- একটি হলো পুরুষের মাংসপেশির শক্তি,অন্যটি হলো নারীর প্রজননে ব্যাপৃত থাকা। নারী কাজ করতে বাধ্য এবং অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে,ফলে যে সমাজ এবং সামাজিক প্রথা তৈরি হয়েছে,তা নারীর বিপক্ষে গেছে।
পুরুষ কায়েম করেছে পিতৃতন্ত্র, এখানে পিতা মানে পুরুষ। উৎপাদনের প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে পুরুষকে সব সময় উদ্ভাবনীমূলক চিন্তা করতে হয়েছে এবং করেছে। তারা তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে প্রকৃতিকে বদলে যুতসই অস্ত্র তৈরি করেছে, কিন্তু নারী বছরের পর বছর একই কাজ করে গেছে। এই যে নারীর বৈচিত্রহীনতা, তা পুরুষকে সুবিধা দিয়েছে এবং শত শত বছর ধরে এটা চলে এসে সামাজিক প্রথায় পরিণত হয়ে গেছে। নারী পরাজিতের জীবন-যাপন করেছে। নারীর কাজের মূল্যায়ন হয়নি,মূলত শারীরিক শক্তি দিয়ে জয় পতাকা উড়িয়েছে পুরুষ। পুরুষের এই আধিপত্যকে প্রথম আঘাত করেছে পুঁজিবাদ। শিল্প বিপ্লব প্রয়োজন ঘটিয়েছে অধিকতর শ্রমের, তখন বাস্তব প্রয়োজনে নারী ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে, পিতৃতান্ত্রিক অহমিকা ভেঙে পড়তে শুরু করে তখন থেকেই। পুঁজিবাদ আবিষ্কার করতে থাকে নতুন নতুন যন্ত্র এবং প্রযুক্তি যা শারীরিক শক্তির বিষয়টিকে গৌণ করে ফেলতে শুরু করে।
নারী ক্রমে দক্ষ হয়ে উঠতে শুরু করে। দেখা যায় শারীরিক শক্তির সামান্য পার্থক্য সত্ত্বেও সমান যোগ্যতায় কাজ করতে থাকে নারী। ভুল ভাঙতে শুরু করে সামাজিক ট্যাবুগুলোর। নারী ছড়িয়ে পড়ে উৎপাদনের সব শাখায়। প্রজননের উপর মানুষ নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে, গর্ভনিরোধক আবিষ্কার নারীকে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দেয়। কিন্তু নারীর মুক্তি ঘটে না। অর্থনৈতিক বৈষম্য ক্ষমতার আর এক খুঁটি হয়ে দেখা দেয়। একে ভাঙায় এখন নারীর কাজ। প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান যতো এগিয়ে যাবে, যতো শারীরিক শক্তির বিষয় গৌণ হয়ে যাবে, ইতোমধ্যে হয়ে পড়েছে, পুরুষ আধিপত্য মিলিয়ে যাবে। এই কাজে নারী যতো সৃজনশীল কাজে নেমে পড়বে, পুরুষতন্ত্র ততো তার আধিপত্য খোয়াবে। নারীবাদের কাজ বিচিত্র সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনীমূলক কাজে বেশি বেশি যুক্ত হয়ে পড়া এবং নারী যেকোনো কাজেই...উন নয়, বরং সমান কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি তা প্রমাণ করা। ফেসবুক থেকে