খান আসাদ: কয়েকদিন আগে আমার প্রিয় এক বামকর্মী দুঃখ প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশে চারিদিকে ‘ইসলামবিদ্ধেষ’। আমি খুব অভিনিবেশ সহকারে বোঝার চেষ্টা করি, কে, কোথায়, কীভাবে, কখন ‘ইসলামবিদ্ধেষ’ প্রচার করছে? এরপর, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব এনটিভি অনলাইন পত্রিকায় বলছেন, ‘ধর্মপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী যখন ক্ষমতায়, তা দেশে ইসলামবিরোধী কোনো কার্যক্রম হবে না। আবারও আমি বোঝার জন্য গভীরভাবে চিন্তা করি। কারা কী ধরনের ‘ইসলামবিরোধী’ কাজ করতে পারে, বাংলাদেশে কেন? ইসলাম বিদ্ধেষ ও ইসলামবিরোধী কাজ আসলে কী, কী কী হলে একটি কাজ ইসলাম বিরোধী হবে? কার কাছে কোনো কাজটি ইসলাম বিরোধী। যেমন ঘুষ কি ইসলাম বিরোধী। মাদ্রাসায় শিশু বলাৎকার কি ইসলাম বিরোধী। কে কোন কাজকে ইসলাম বিরোধী হিসেবে ‘বয়ান’ তৈরি করছে। কারা এই ‘বয়ান’ কে বৈধতা দিচ্ছে। কেন দিচ্ছে? হঠাৎ করে কেন ‘ইসলাম বিরোধীতা’ নিয়ে আলাপ। এর মানে কি। রাজনৈতিকভাবে দুই বিপরীত মেরুর দুইজন লোক দেখছেন যে, বাংলাদেশে ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ ও ‘ইসলাম বিরোধিতা’ রয়েছে বা হতে পারে।
কিন্তু আমি কোনো ‘ইসলামবিদ্বেষ’ ও ‘ইসলামবিরোধিতা’দেখছি না। আমি যা দেখছি, তাতো বিপরীত কিছু। ইসলাম বিদ্বেষ এর বদলে ‘ইসলামপ্রেম’। এক বিশেষ ধরনের ইসলাম প্রেম। চারিদিকে ‘ইসলামপ্রেম’। হিজাবে, ওয়াজে, ‘মুসলমানের’ মন খোজা বুদ্ধিজীবীর টকশোতে, আল্লাহ হাফেজে ও আলহামদুলিল্লায়। বাবা-মা এমন ইসলামপ্রেমী যে ছেলের নাম রেখেছেন আরবিতে। এমন নাম যে তা আরবের লোকেরা লজ্জায় উচ্চারণ করে না। কোথায় নেই ইসলামপ্রেম। ইসলামপ্রেম শুনলেই আমার সেই ১৯৭১ সালের কথা মাথায় আসে। তখন একটি ক্ষুদ্র সংখ্যক বাঙালি, জামায়াতে ইসলামি পতাকা তোলে, ইসলামপ্রেমে মত্ত হয়ে লুণ্ঠন, খুন, ধর্ষণ, এমন কোনো অপকর্ম নেই যা করেনি। একটি দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করা হয়েছে, ‘ইসলামপ্রেমে’। তাদের বক্তব্য ছিলো, বাংলাদেশে ইসলাম বিপন্ন হবে, যদি পাকিস্তান ভাঙে। তারা বাংলাদেশে ‘ইসলাম’ নিয়ে মহাচিন্তিত ছিলো।
এখন তাদের সঙ্গে আরও অনেক লোক দেখছি ‘ইসলাম’ নিয়ে চিন্তিত, কেন। বাংলাদেশে ইসলামের অভিভাবক কারা? তাদের ইসলাম নিয়ে এতো চিন্তার কারণ কি। বাংলাদেশের ইসলামি রাজনীতির ইতিহাস কী বলে। এর উত্তর কিন্তু আপনাকে নিজে নিজেই পেতে হবে। আর তা পেতে হলে, মনে হয় একটু গভীরে তাকাতে হবে। তাকাতে হবে, বাংলাদেশ কি করে আজকের অবস্থায় এলো। ‘ইসলাম’ রক্ষা আসলে কী কী সংকট আড়াল করছে তা আপনাকে আলোয় আনতে হবে। যেমন বেকারত্ব, দারিদ্র্য, লুণ্ঠন, দুর্নীতি, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ। এগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা সম্পর্কিত, সিস্টেমিক। নয়া উদারবাদি উন্নয়নের সঙ্গেও এর সম্পর্ক আছে। ‘ইসলাম’ বা আত্মপরিচয়ের রাজনীতি হচ্ছে একখণ্ড কাপড়ের মতো। একই সঙ্গে মৌলিক বৈষম্য ও সহিংস ব্যবস্থা আড়াল করার পর্দা, আর অন্যদিকে দুই নাম্বারি ইস্যু সামনে এনে সাধারণ মানুষকে সমাবেশিত করার পতাকা। বৈষম্য ও সহিংসতা বাড়লে সমাজ প্রতিক্রিয়া দেখাবেই, সেই প্রতিক্রিয়াকে বিপথে চালনার জন্য এই পর্দা ও পতাকার দরকার হয়। ফেসবুক থেকে