আহসান হাবিব : আমি ‘পুরুষ’ ভাবতেই ভালো লাগে আমার। এটা আমার প্রাকৃতিক আইডেন্টিটি। আমার সামাজিক আইডেন্টিটি আমি ‘মানুষ’ একজন রাজনৈতিক প্রাণী। আমি মানুষ হিসেবে যখন আমার দিকে তাকাই একজন পুরুষকে দেখি, খুব ভালো লাগে তাকে দেখতে। আমি প্রকৃতিকে কুর্নিশ করি। আমি প্রকৃতির অভিপ্রায়ে যৌনতায় অংশ নিই। আমার বিপরীত লিঙ্গ ‘নারী’ তখন আমার কাছে শ্রেষ্ঠ আরাধ্য হয়ে ওঠে। আমি সুখে ভাসতে থাকি, আমি প্রকৃত প্রেমিক হয়ে উঠি। নারী তখন আমার কাছে প্রকৃতির আইডেন্টিটি ছাপিয়ে মানবিক হয়ে উঠে। সামাজিকভাবে তখন তাকে আর নারী মনে হয় না, মনে হয় আমার অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘মানুষ’। আমি যখন পুরুষ তখন কী ভালো লাগে আমার।
আমার গঠন, আমার ডিজাইন এবং সবচেয়ে ভালোলাগে এর পেছনের নাটের গুরুটিকে। কে সে? না, সে কোনো প্রাণী নয়, বস্তু একটি হরমোন, নাম তার ‘টেস্টোসটেরন’। এই হরমোনই আমাকে পুরুষ করে তোলে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যতো আকর্ষণ এবং প্রকৃতির অভিপ্রায়ে সক্রিয় অংশগ্রহণে ঠেলে দেয়, এই হরমোনই সেসব করে।
এই হরমোন শুধু লিবিডোর জন্য দায়ী নয়, আরও অনেক কাজ করে। শরীরের সেরা অংশ এর মাংসপেশীর গঠন, অস্থির গঠন এবং লোমের আচ্ছাদন তৈরি করে। অবশ্য সামান্য পরিমাণে নারী হরমোনও আমার দেহে আছে যা আমাকে সামান্য নারীর চরিত্রও দান করে। আমি এইদিক থেকে শুধু অবিমিশ্র পুরুষ নই, নারীও। দ্বন্দ্ব ছাড়া কোনো প্রগতি নেই। এই চরম সত্যিটা প্রকৃতির চেয়ে কেউ ভালো বোঝে না, কেননা এটা টিকেই আছে এই দ্বন্দ্বের পারস্পরিক ক্রিয়ায়। দ্বন্দ্বের দুই অংশের আমি একটি পুরুষ অন্য অংশ নারী, দুই এ মিলে পূর্ণ হয়ে উঠি।
আমি একা অপূর্ণ, পূর্ণ হই নারীর সঙ্গে মিলে। পুরুষ হিসেবে আমার তাই আলাদা গৌরব নেই। গৌরব বোধ করি তখন যখন আমি নারীতে লীন হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করি। আমি তাই পুরুষতন্ত্রকে ঘৃণা করি, কেননা এটা নারীকে অধস্তন করার পাঁয়তারা করে এবং অন্যায়ে লিপ্ত হয়। আমি ‘পুরুষ’ আমার প্রিয় সঙ্গী ‘নারী’, দুইয়ে মিলে হয়ে উঠি সম্পূর্ণ মানুষ।