আহসান হাবিব : দেহবাদ যখন আমি বলি ‘দেহই সব’ তখন আমি এর ইন্দ্রিয় তৎপরতার কথাই বলি। আমাদের দেহটি একটি গ্রেট সেন্সর। বাইরের যা কিছুর সংস্পর্শে সে আসে, প্রতিক্রিয়া দেখায়। এটা দেহগত বা ইন্দ্রিয়গত প্রতিক্রিয়া, যেমন সে উষ্ণ কিছুর সংস্পর্শে আসলে একরকম আবার ঠাণ্ডার সংস্পর্শে আসলে ভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া দেখায়।
এই প্রতিক্রিয়া দেখানোর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি জটিল, মস্তিস্ক এবং এর সঙ্গে যুক্ত সমগ্র স্নায়ুতন্ত্র এই কাজে জড়িত। প্রতিক্রিয়ায় কি ঘটে দেহতন্ত্রে, এটা দেখা যায় কিংবা কোষীয় স্তরে কি ঘটে তা বের করে আনা যায়। কিন্তু যা যায় না তা হলো ইন্দ্রিয় যে দেহগত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ক্রিয়া হিসেবে বিমূর্ত ইচ্ছা ব্যক্ত করে তা। যেমন রাগ কিংবা ভালোবাসা কিংবা বেদনা, আমরা এগুলো বুঝতে পারি কিন্তু দেহের কোথাও এটা খুঁজে পাই না।
কী ঘটে তা পাই কিন্তু রাগ কিংবা বেদনা বলে কোনো আলাদা কিছু পাই না। এটা বিমূর্ত, এর বস্তুগত কোনো ফর্ম নেই অথচ এটা বস্তু থেকেই নির্মিত। ধরুন আমাদের কোনো ইন্দ্রিয় নেই, তখন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, এর প্রকাশ হিসেবে কোনো রাগ, ভালোবাসা বা বেদনাও নেই। আর একটা আমার প্রিয় উদাহরণ দিই- ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, আপনার নাকে এসে বিঁধছে গন্ধ, ধরুন গোলাপের গন্ধ, যে গন্ধ সম্পর্কে আপনার ঘ্রাণেন্দ্রিয় পূর্বেই অভিজ্ঞতাপ্রাপ্ত, তখন আপনি নিশ্চিত হবেন যে আপনার ধারে কাছেই গোলাপ ফুলের অস্তিত্ব রয়েছে।
গোলাপ ফুল নেই, গন্ধ নেই। কিন্তু আপনি যদি গোলাপ ফুলটি কুচি কুচি করে কাটেন তবুও কোনো গন্ধ পাবেন না। পাবেন কোষীয় ফাংশান। ঠিক তেমনি রাগলে ইন্দ্রিয়ে কি ঘটে তা পাবেন কিন্তু রাগ নামক কোনোকিছুর অস্তিত্ব পাবেন না। রঙের ক্ষেত্রেও একই, পাতা সবুজ কিন্তু পাতার ভেতরে সবুজ বলে আলাদা কোনোকিছুর অস্তিত্ব নেই। এটাই দেহবাদ কিংবা বস্তুবাদ ।