শিরোনাম
◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ

প্রকাশিত : ১০ অক্টোবর, ২০২০, ০৬:৫৭ সকাল
আপডেট : ১০ অক্টোবর, ২০২০, ০৬:৫৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] নবজাতক ফেরতসহ ঘর ও ভাতা পাচ্ছেন সন্তান বিক্রি করা সেই হাসিনা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: [২] শুক্রবার (৯ অক্টোবর) রাতে নবজাতককে ফেরৎ নিয়ে প্রতিবন্ধি হাসিনার কোলে তুলে দেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।

[৩] হাসিনা বেগম আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর স্ত্রী। তিনি একই এলাকার তালুক হরিদাস নয়াটারী গ্রামের মৃত আজিজার রহমানের মেয়ে।

[৪] জানা গেছে, ২০ বছর আগে একই গ্রামের টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর সাথে বিয়ে হয় হাসিনার। কিন্তু হাসিনা ছিলেন জোকতারের দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের কিছু দিন স্বামীর বাড়িতে থাকলেও পরে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনার ঠাঁই হয় তালুক হরিদাস নয়াটারী বাবার বাড়িতে।

[৫] সংসারের খরচ বহন না করলেও স্বামী জোকতার সম্পর্ক রেখেছিল হাসিনার সাথে। এরই মাঝে তার সংসারে এক মেয়ে ও দুই ছেলের জন্ম হয়। বড় মেয়ে রোসনার বিয়ে দেন।

[৬] ফুটো টিনের ওপর পলিথিন সাঁটানো একমাত্র ঝুপড়ি ঘরে দুই ছেলে হাসান ও রাসেলকে নিয়ে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনা বেগম। করোনাকালে এবং মাঠে কাজ না থাকায় বেকার কৃষি শ্রমিক হাসিনা বেগম স্থানীয়ভাবে ঋন করে অনাহারে সংসার চালান। দেনা হয়ে যায় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এরই মাঝে গত মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) সকালে হাসিনা বেগম একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। অভাবের মাঝে সন্তানকে প্রতিপালনের চিন্তায় পড়েন হাসিনা। তবে তার ভাই নিঃসন্তান কেরামত আলী বোনের সন্তানকে নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রতিবেশী অধির চন্দ্র তার শ্বশুর বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট এলাকার জনৈক দম্পতিকে সন্তানটি দিতে বলেন। এতে বাধা দেন হাসিনা বেগম ও তার বড় ছেলে হাসান।

[৭] অধির চন্দ্র রাজারহাটের ওই দম্পত্তির হাতে নবজাতককে তুলে দিতে হাসিনার স্বামী জোকতার আলীকে ম্যানেজ করেন। এতে হাসিনা ও তার ছেলে রাজি না হলেও জোকতার ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে জোরপুর্বক সন্তানকে তুলে দেন রাজাহাটের দম্পত্তির হাতে। নবজাতক ভাইকে আটকানোর চেষ্টা করে বাবার গালমন্দের শিকার হন হাসান। নবজাতক বিক্রির টাকায় ঋনের ১০ হাজার পরিশোধ করেন হাসিনা বেগম। কিন্তু নাড়ি ছেড়া ধন হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছোট ভাইকে রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে বড় ভাই হাসান বাবা মায়ের সাথে অভিমান করে ঘর ছেড়ে চলে যায়।

[৮] এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি দেখে জেলা প্রশাসক আবু জাফরের নির্দেশে শুক্রবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে ওই বাড়িতে যান আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সাইফুল ইসলাম। এসময় বিক্রিত নবজাতককে ফেরৎ নিয়ে আসতে দাতাকে ফোনে জানানো হলে রাতে নবজাতককে ফেরৎ নিয়ে আসেন গ্রহনকারীরা। এরপর রাতে পুনরায় হাসিনার বাড়িতে যান ইউএনও এবং ওসি। তারা সেই নবজাতককে গ্রহন করে হাসিনার বেগমের হাতে তুলেন দেন।

[৯] এ সময় নবজাতকের জন্য সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা হাসিনাকে প্রদান করা হয়। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় হাসিনাকে প্রতিবন্ধি ভাতার তালিকাভুক্তসহ জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের আওতায় প্রতিবন্ধি হাসিনা ও তার ভাই কেরামত আলীকে পৃথক দুইটি ঘর দেয়ার ঘোষনা দেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।

[১০] বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনা বেগম বলেন, ছাওয়া (নবজাতক) ফেরতসহ নগদ টাকা পাইলাম এবং ভাতা ও ঘর দিবার চাইছে। যারা এসব দিলো আল্লায় তাদের ভালো করবে।

[১১] আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, প্রতিবেদন দেখে নবজাতককে ফেরত নিয়ে এসে হাসিনা বেগমের কোলে তুলে দিয়েছি। একই সাথে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী মহোদয়ের পক্ষে নবজাতকের জন্য ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। একই সাথে হাসিনাকে প্রতিবন্ধি ভাতাভুক্তসহ তাকে এবং তার ভাই কেরামতকে ঘর করে দেয়া হবে। নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরো কোন প্রয়োজন হলে সরকারী ভাবে সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়