শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৭:৫৭ সকাল
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৭:৫৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আসিফ নজরুল: সব দায় শোধ হলে আবার চলে যাবো তার খোঁজে

আসিফ নজরুল: আমি প্রথম তাবলিগে যাই ১৯৯৮ সালে। তখন লন্ডনে ছিলাম। পিএইচডির দুশ্চিন্তায় মাথা খারাপ অবস্থা আমার। পিএইচডি না হলে দেশে ফিরবো না কখনো- এটা ভেবে কান্না আসতো। আত্নহত্যা করবো কিনা এমনকি এই চিন্তাও আসতো মাথায়।

এমন ছিন্নভিন্ন মানসিক অবস্থায় আমার প্রতিবেশী হয়ে আসেন আমার একজন কলিগ। তিনি আইন বিভাগে আমার সিনিয়র শিক্ষক লিয়াকত আলী সিদ্দিকী। ছাত্রজীবনে একসময় বিতার্কিত হিসেবে নাম করেছিলেন। প্রথমদিকে পড়তেন জিনস, টি-শার্ট আর কেডস। অল্পদিন পর থেকে পুরো ইসলামী পোষাক।

তিনি আমার মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন। প্রায় প্রতিদিন ডেকে খাওয়াতে নিয়ে যেতেন, পড়াশোনা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে মানা করতেন। তিনি নিজে লন্ডনে মাষ্টার্স শেষ করার একমাস আগে দীর্ঘদিনের জন্য তাবলিগে চলে গিয়েছিলেন, ডিগ্রিটা শেষ করেছিলেন ছয় বছর পর। এ দুনিয়ার সাফল্য, খ্যাতি, অর্জন সত্যি তুচ্ছ তার কাছে। কাজেই তিনি এসব বললে মন দিয়ে শুনতাম।

কিছুদিন পর জানা গেল তিনি আবার তাবলিগে যাচ্ছেন লীডস্-এ। আমিও যেতে রাজি হলাম। চারদিনের পড়া শিকেয় তুলে রাখার এই সাহস কিভাবে পেলাম জানি না। ফোনে স্বজনদের জানিয়ে দিলাম কোনো যোগাযোগও করতে পারবো না কয়েকদিন।

মক্কার হজযাত্রীদের মতো পবিত্র মনে রওয়ানা দিলাম লীডসের পথে। বাসে সবাই দোয়া দরুদ পড়ছে, আমিও যোগ দিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি বিভিন্ন দেশের ছাত্রদের মেলা। কাউকে চিনি না, কিন্তু কয়েক মুহূর্তে এমন আপন হয়ে গেল সবাই। চোখাচোখি হলে হাসে, সালাম দেয়, খাবার নিতে গেলে এ ওকে ঠেলে দেয় আগে, কোনো একটা সাহায্য করার জন্য মুখিয়ে থাকে সবাই।

দিনরাত গোল হয়ে বসি। একজনের পর একজন সুরা পড়ি। কেউ কেউ ধর্মের বয়ান দেন। দোযখ- বেহেস্তের বিবরণ না, সেখানে শুধু ভালো, নিঃস্বার্থ আর সৎ হওয়ার শান্ত আহ্বান আর সৃষ্টি রহস্যের আকুল অনুসন্ধান।

তাড়া নেই, অপেক্ষা নেই, চিন্তা নেই- আশ্চর্য এক প্রশান্তিময় সময়। ঘুমাতে গেলে ঘুম আসে, গভীর ঘুম অনায়াসে ভাঙ্গে আজানের শব্দে। যেটা খাই অমৃতের মতো লাগে, যতোটুকু খাই মন ভরে থাকে। বুকের ভেতর আঁচড় নেই, নেই দাহ, হাহাকার! কিসের পিএইচডি, কিসের ঘর-সংসার। মনে হলো যাবো না এ জায়গা ছেড়ে কোনদিন আর।

আমার জীবনে তীব্রতম, অবিশ্বাস্য, দুঃসাহসী আর অপার আনন্দের বহু স্মৃতি আছে। কিন্তু সবচেয়ে প্রশান্তিময় দিন কেটেছে লীডস্-এর মসজিদে। যে সৃষ্টিকর্তাকে আমি ছোটবেলা থেকে খুঁজি গাছের নবীন পাতা, আকাশের অবিরাম বদলে যাওয়া, দূর নক্ষত্রের নিশ্চল আলোয় আর মাঝরাতে অবিশ্রান্ত বৃষ্টির ঘোর লাগানো বর্ষণে, লীডস্-এ আমি তাকে অতি সামান্য হলেও অনুভব করতে পেরেছিলাম। যে শান্তি আমি পেয়েছি সেই চারদিন তা আর পাইনি আগে পরে কখনো।

জীবনের সব দায় শোধ হলে আমি একদিন আবার চলে যাবো তার খোঁজে। অনন্তকালের জন্য। জানি না তিনি আমাকে সে সুযোগ দিবেন কিনা।

সূত্র : ফেসবুক থেকে নেয়া

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়