সৈয়দ ফায়েজ আহমেদ: মাত্র আট বছর বয়সে প্যারিসে জন্ম নেওয়া কিংসলি কোম্যান শহরের বিখ্যাত ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের একাডেমিতে যোগ দেন। মা ছিলেন শ্বেতাঙ্গী আর বাপ ক্রিশ্চিয়ান কোম্যান এসেছিলেন গুয়াদুয়েলপা নামক ফরাসিদের অধীনস্থ এক ছোট ক্যারিবীয় দ্বীপ হতে। ওই দ্বীপের বংশধর ছিলেন ফরাসি কিংবদন্তি ফুটবলার থিয়েরি অরি। বাপ চাইতেন ছেলেও যাতে ওমন খেলোয়াড় হয়। আর ছেলের স্বপ্ন ছিলো শহরের বিখ্যাত ক্লাবের হয়ে বড় বড় ট্রফি জিতবে। মারাত্মক ট্যালেন্ট আর ততোধিক জেদ নিয়ে সে দক্ষ খেলোয়াড় হয়ে উঠে। পিএসজির ভবিষ্যৎ তারকা ভাবা হচ্ছিলো তাকে। কিন্তু সেটা হলো না। ক্লাবটায় আরবীয় তেলের টাকা ঢুকলো, তরুণ ট্যালেন্টের বদলে চাই দামি দামি তারকা। অঢেল টাকা দিয়ে ওদের আনা হলো আর দশ বছর ধরে ক্লাবের আলো হাওয়ায় বেড়ে ওঠা কিংসলেকে ব্রাত্য করে দেওয়া হলো। ইতালির জুভেন্টাসে দুইটা বাজে বছর কাটানোর পর জার্মানীর বায়ার্নে যোগ দিলেন।
এই দলে জায়গা করা সহজ না হলেও ভালোই করছিলেন। দলটা দারুণ খেলে ২০২০ এর চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে উঠলো। প্রতিপক্ষ পিএসজি। কোচ কিংসলেকে প্রথম একাদশে রাখলেন। খেলার আগে বোদ্ধাদের কতো হিসাব। লেভানডস্কি নাকি নেইমার। মুলার নাকি এমবাপ্পে। গ্যানাবরি নাকি ডি মারিয়া। গোল কি মোট ১০টা হবে, নাকি ৭-৮টা? অতো না হলেও ৪-৫টা তো হবেই। হায়, গোল হইলো মাত্র ১টা। তাও সেটা কি দিলো? সেই কিংসলে কোম্যান। ফরাসি তরুণের গোলে ফরাসিদের দামি ক্লাব লুটায়ে পড়লো ফাইনালে। কেমন লাগছিলো কোম্যানের?
শৈশব আর কৈশোরে যেই ক্লাবে বেড়ে উঠেছেন তাদেরই বধ করতে? খারাপ লাগার চেয়ে প্রতিশোধটাই মনে হয় কাজ করছিলো, কোটি কোটি ইউরোর দামি খেলোয়াড়দের জায়গা দিতে যাকে বাদ দেওয়া হয়েছিলো সেই আজকে হিরো। আরও একবার ফুটবলের মহামঞ্চে টাকার উড়াউড়ি এক তরুণের জেদের কাছে হেরে গেলো। হয়তো গল্পটা অতিরোমান্টিক, হয়তো আরো একশবার টাকার কাছেই জেদগুলা হারবে। কিন্তু ফুটবলের মঞ্চে টাকার বস্তা সবসময় জিতবে না এই মেসেজটা দেওয়ার জন্য হলেও কিংসলে কোম্যানের এই গল্পটা মনে থাকবে বহুকাল। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :