কামরুল হাসান মামুন: রবীন্দ্রনাথের ‘দীন দান’ শিরোনামে একটি কবিতা আছে। সেখানে বলা হয়েছে তার মর্মার্থ অনেকটা এইরকম। যখন প্রায় ২ কোটি মানুষ খরায় পীড়িত, মানুষ যখন খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য মরিয়া তখন তারা রাজার দুয়ারে এসেছিল। কিন্তু রাজা তাদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। খরাপীড়িত মানুষেরা তখন বনে-জঙ্গলে আর রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছিল। ঠিক সেই সময় রাজা আপনি ২০ লাখ সোনার মুদ্রা দিয়ে মন্দির বানিয়েছিলেন। ঠিক তখন ঈশ্বর বলেছিল যেই রাজা তার প্রজাদের অন্ন বস্ত্র আর বাসস্থান দিতে ব্যর্থ হয় সেকি সত্যি আমাকে আমার জন্য ঘর বানাতে পারে আর আমি কি সেই ঘরে থাকতে পারি?
কাজী নজরুল ইসলামেরও ‘মানুষ’ শিরোনামে এইরকম ভাবধারার একটি কবিতা আছে। ‘মসজিদে কাল শিরনি আছিল, অঢেল গোস্ত-রুটি। বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি! এমন সময় এল মুসাফির গায়ে আজারির চিন, বলে, ‘বাবা, আমি ভুখা-ফাখা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’ তেরিয়াঁ হইয়া হাকিল মোল্লা ‘ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা, ভুখা আছ মর গো-ভাগারে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?’ ভুখারি কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিলÑ ‘তা’ হলে শালা, সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত- রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা! ভখারি ফিরিয়া চলে, চলিতে চলিতে বলেÑ ‘আশিটা বছর কেটে গেলো, আমি ডাকিনি তোমায় কভু, আমার ক্ষুধার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু, তব মসজিদ-মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি, মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি’।
ভালো মানুষদের এমনি মিল হয়। আমরাই কেবল আমাদের কবি আর তাহাদের কবি বলে করি ভাগাভাগি।