আসাদুজ্জামান বাবুল, মাহাবুব সুলতান : [২] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ার ছিকটি বাড়ী গ্রামের সেই দরিদ্র নুপুরের বাড়ীতে সরকারের বরাদ্দকৃত খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিলেন প্রশাসন। পরিমানে একেবারেই কম হলেও এই প্রথম সরকারের বরাদ্দকৃত অনুদান পেয়ে খুশি নুপুর ও তার পরিবার।
[৩] আজ শুক্রবার আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেঁ নিয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো, মহসিন উদ্দিন এ খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছেন। রাত ৮ টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা ইউএনও এসএম মাহফুজুর রহমান ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো, মহসিন উদ্দিন । সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো, মহসিন উদ্দিন আমাদের এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, কোটালীপাড়া উপজেলার ছিকটি বাড়ি গ্রামের হত দরিদ্র কৃষক বাবা কালিদাস বিশ্বাসের উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে নুপুর জানুয়ারী মাসের ২০ তারিখে চাকুরী চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি খোলা চিঠি লেখেন। কিন্ত কোন কারনে ওই সময় বিষয়টি কারো নজরে পড়েনি। তবে. চিঠির বরাত দিয়ে গত ২৩ মে “প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরিদ্র নুপুরের খোলা চিঠি,“হয় চাকুরী না হয় আত্নহত্যা”শিরোনামে: দৈনিক আমাদের সময় .কম ও নিউজ একাত্তর ২৪.কম এ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদটি ১০ মিনিটের মধ্যে সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
[৪] পরদিন ২৪শে মে রোববার আনুমানিক বিকাল ৪ টার দিকে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের প্রশাসন ছুটে যান নুপুরের বাড়ীতে। নুপুরের জীবন সংগ্রামের ঘটনাসহ পারিবারিক অবস্থাও জানতে চান তারা। বেশ কিছুক্ষন কথা বলার পর চাকুরীর আশ্বাস দিয়ে নুপুরের সিভিও নিয়ে যান তারা। যাওয়ার আগে তারা বলে গেছেন,সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আশা করি আপনার জব হবে। নুপুরের জীবন কাহিনী গনমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার এক সপ্তাহ পর আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় কোটালীপাড়া উপজেলা ইউএনওর নির্দেশে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেঁ নিয়ে কোটালীপাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেঁ নিয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো, মহসিন উদ্দিন এ খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছেন। খাদ্য সামগ্রী হলো, ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, এক কেজি তেল, এক কেজি চিনি, ২ কেজি চিড়া, এক কেজি লবন ও ৫ প্যাকেট সেমাই নুপুরের বাড়ীতে পৌছে দেন। এ সময় নুপুরের ঘটনার বিস্তারিতও জানতে চেয়ে নানান প্রশ্ন করেন তিনি। আপনার দৃষ্টিতে কি মনে হয়েছে, আসলেই নুপুরের একটি সরকারী চাকুরীর প্রয়োজন এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেখুন. তাদের পারিবারিক অবস্থা দেখে আপনাদেরমত আমাদের কাছেও মনে হয়েছে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত নুপুরের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে একটি চাকুরী হলে তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড় নুপুর কান্না ভরা চোখে দৈনিক আমাদের সময়.কমসহ দেশের বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, এরআগেও একটি পত্রিকা ও একটি অনলাইন পত্রিকায় তার এই খোলা চিঠি প্রকাশিত হলেও এ ভাবে আবেগ দিয়ে আমাকে নিয়ে কেউ লেখেননি। ২৩ মে দৈনিক আমাদের সময় .কম ও নিউজ একাত্তর ২৪.কম এ প্রকাশিত সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এর পরদিন রোববার আনুমানিক বিকেল ৪ টার দিকে একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের র্যাব-পুলিশ সদস্যরা আমাদের বাড়ীতে এসেছেন। আমার বাড়ীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোক আসায় আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি আসাবাদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা যোগ্যতা অনুযায়ী আমাকে একটি সরকারী চাকুরী দিবেন। উল্লেখ থাকে যে, গত ২৩ মে শনিবার দৈনিক আমাদের সময়.কম এ প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরিদ্র নুপুরের খোলা চিঠি,“হয় চাকুরী না হয় আত্নহত্যা”শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। নুপুরের খোলা চিঠিটি হূবুহ তুলে ধরা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,জননেত্রী শেখ হাসিনা, আমার নমস্কার নিবেন। অত্যন্ত দুঃখ-কষ্ট ও হাতাশা নিয়ে আপনার কাছে একটি খোলা চিঠি লিখছি। আপনার নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ার ছিকটি বাড়ি গ্রামের এক কৃষক পরিবারের সন্তান আমি। বাবা-কালিদাস বিশ্বাস ও মা-মলিনা বিশ্বাস। দুই ভাইবোনের মধ্যে আমি বড়। ছোট বেলা থেকেই মানুষ নানান সপ্ন দেখে। ঠিক আমিও সপ্ন দেখেছিলাম বড় হয়ে লেখা পড়া শিখে রাজনীতি-সামাজিকতার পাশাপাশি একটি সরকারী চাকরি করবো। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বেশ কিছু দিন যাবত কিন্ত সরকারী কোন চাকুরী মিলছেনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি একজন নারী। আমি যতোটুকু জানি নারীদের বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন আপনি। এমনকি সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়েও নারীদের স্থান করে দিয়েছেন। আমার এসএসসিতে জিপিএ-৩.৯৪ ও এইচএসসিতে ৩.২০। বাংলায় অনার্স-৩.১৩ ও মাস্টার্স-এ ৩.২২ জিপিএ পেয়েছি। কিন্তু কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ফল মিলে না। আমার চাকরির বয়সও প্রায় শেষ। বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের কষ্ট আর আমার সহ্য হয় না। ছোটবেলা থেকেই দুঃখ-কষ্ট ও অর্থনৈতিক অনটনের মধ্য দিয়েও লেখা-পড়া ছাড়িনি। এক বেলা বা আধ পেটা খেয়ে স্কুল-কলেজে গিয়েছি। মা-বাবার প্রেরণা ও আমার অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য এ পর্যন্ত অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন সহ লিখিত পরীক্ষাও দিয়েছি। এর মধ্যে অন্তত ১৫টিরও বেশি মৌখিক পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করেছি। পরীক্ষাও ভালো হয়েছে। কিন্তু আমার ভাগ্যে চাকুরী জোটেনি। তাই মাঝে মধ্যে নিজেকে সামলে রাখতেও কষ্ট হয়। হাতাশায় ভুগি। এমনকি আত্মহত্যার মতো বিষয়টিও মাথায় আসে। কিন্তু মা-বাবা ও ছোট ভাইয়ের কথা চিন্তা করে সব ভুলে যাই। কিন্তু এখন আর কোনো উপায় দেখছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমার ও আমার গরীব পরিবারের কথা বিবেচনা করে অন্তত্য পক্ষে একটা চাকরির ব্যবস্থা করুন, প্লিজ। না হলে আমার পরিবারটি টিকবে না, ধুঁকে ধুকে মরবে। আপনার সদয় দৃষ্টিই পারে একটি অসহায় পরিারের দুঃখ দিনের পরি সমাপ্তি ঘটাতে। অন্যথায় পরিবারের জন্য শেষ পর্যন্ত আমাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে।