আবুল বাশার শেখ, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:[২] জেলার ভালুকায় গণধর্ষণের পর লিপি আক্তার নামে এক মিল শ্রমিককে হত্যা ঘটনায় জরিত থাকার অভিযোগ পাঁচ যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
[৩] শনিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, ভালুকা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন। গত ১৯ মার্চ বিকেলে উপজেলার হবিরবাড়ী মায়ের মসজিদ এলাকার ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পূর্ব পাশে বিলাইজোরা খালের সেতুর পাশে থেকে লিপি আক্তারের অর্ধগলিত লাশ অজ্ঞাত অবস্থায় উদ্ধার করেছিলো পুলিশ।
[৪] গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রকিবুল ইসলাম (১৯) হৃদয় মিয় া(১৮), জয়নাল(২০), মামুন (১৮) ও রাব্বি (২২)। হৃদয়ের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার ধোবাউড়া উপজেলার হরিণধরা গ্রামে। সে উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় ভাড়া থাকেন।এ ছাড়া অন্যন্যদের বাড়ি ভালুকা উপজেলায়।
[৫] পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, গত ১৯ মার্চ বিকেলে উপজেলার হবিরবাড়ী মায়ের মসজিদ এলাকার ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পূর্ব পাশে বিলাইজোরা খালের সেতুর পাশে থেকে একটি অর্ধগলিত নারীর অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন নূর হোসেন নামের এক ব্যক্তি লাশ দেখে শনাক্ত করেন, এটি তাঁর মেয়ে লিপি আক্তার।
[৬] নূর হোসেনের বাড়ি উপজেলার কংশেকুল গ্রামে। তিনি পরিবার নিয়ে জামিরদিয়া এলাকায় থাকেন। লিপি আক্তার পাশের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় এএ ইয়ার্ন নামের একটি কারখানায় চাকরি করতেন। গত ১৫ মার্চ লিপি আক্তার নিখোঁজ হন। ১৭ মার্চ গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়রী করেন লিপির বাবা নূর হোসেন। ২০ মার্চ (লিপির লাশ শনাক্তের দিন) নূর হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে ভালুকা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
[৭] ৬১ দিন পর গত বৃহস্পতিবার এই ঘটনার সঙ্গে জরিত সন্দেহে রকিবুল ইসলাম, হৃদয় মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জয়নাল, মামুন ও রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিজ্ঞ আদালতে রকিবুল ও হৃদয় ঘটনার সঙ্গে জরিত থাকার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
[৮] জানতে চাইলে এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভালুকা মডেল থানার এসআই ইকবাল হোসেন জানান, লিপি আক্তারের লাশ হওয়ার ঘটনা বিস্তারিত স্বীকার করেছেন রকিবুল ও হৃদয়। রকিবুলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে লিপি আক্তারের। পরে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপর লিপি বিয়ের জন্য চাপ দেয় রকিবুলকে। কিন্তু রকিবুল তাতে রাজি না হয়ে কিছুটা যোগাযোগ কমিয়ে দেয় লিপির সঙ্গে। গত ১৪ মার্চ রকিবুল আরও কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে লিপিকে গণধর্ষণের পরিকল্পনা করে। সেই মোতাবেক ১৫ মার্চ রাত ১০ টায় লিপির কারখানা ছুটি শেষে ভালুকা উপজেলার কড়ুইতলা মোড়ের উত্তর পাশে একটি গভীর বাগানে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে লিপির হাত বেধে রাব্বি, মামুন, রকিবুল, আশিক, হৃদয় ও জয়নাল ধর্ষণ করে। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে ঘটনাস্থলেই লিপির মৃত্যু হয়। পরের দিন ১৬ মার্চ রাত ১০ টায় লিপির লাশ ওই স্থানে ফেলে রেখে যায় এই আসামিরা।
[৯] এবিষয়ে মামলা তদারকি কর্মকর্তা ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খোরশেদ আলম বলেন, লিপি হত্যা মামলাটি ছিল ক্লো-লেস মামলা। রহস্য উৎঘাটনে বেশ বেগ পেতে হতে হয়েছে। তাঁর কারণ হল, ওই মেয়ের পরিবারের অন্য সদস্যরা বাক-প্রতিবন্ধী। তারা কোন ধরণের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেনি। মামলার রহস্য উৎঘাটন করতে এক দিকে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য দিকে তদন্ত কর্মকর্তাকে ছদ্মবেশ ধারণ করে আসামিদেরকে শনাক্ত করতে হয়েছে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :