রিয়াদ ইসলাম : [২] ‘বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে ঢাকা চলে গেছে। সংসারের হাল আমাকেই ধরতে হয়েছে। স্কুল ছুটির পর লেবু বিক্রি করে যে টাকা পাই, তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে।’
[৩] সোমবার (১১ মে) বিকেলে ঈশ্বরদী বাজারের নূরমহল্লা এলাকার ৮ বছর বয়সের লেবু বিক্রেতা মো: সম্রাট এভাবেই প্রকাশ করছিলো তার কথা।
[৪] শিশু বয়সেই সংসারের হাল তাঁর কাঁধে। যে সময়টায় সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে-খেলাধুলায় কাটানোর কথা, সে বয়সেই পরিশ্রম করতে হচ্ছে। প্রতিদিন রোজগারের চিন্তায় লেবু নিয়ে ফুটপাতে বসতে হচ্ছে।
[৫] পৌর সদরের বস্তিপাড়া মহল্লার ছোট্ট কুঁড়েঘরে মা এবং তিন বছরের ছোট বোন তনিমা আক্তার ঈষিকা নিয়ে বসবাস সম্রাটের। স্থানীয় মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সে। শুক্রবার সারাদিন এবং অন্যান্য দিন স্কুলের ছুটি শেষে লেবু বিক্রি করে সম্রাট।
[৬] সম্রাট জানায়, সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী বাবাই ছিল, কিন্তু ২ বছর আগে ওদের ফেলে রেখে চলে গেছে। মায়ের পক্ষে বাসা বাড়িতে কাজ করে তিনবেলা খাওয়া, পড়াশুনার খরচ চালানো সম্ভব না। তাই বসে না থেকে উর্পাজনে নেমেছে। পড়াশুনা করে কোনো একটা চাকুরি করা সম্ভব, এই ধারনাটুকু তার আছে। তবে মাঝে মাঝে বিকেলে একটু খেলাধুলা করতে মন চায় কিন্তু বাড়ির কথা চিন্তা করে আর খেলাধুলা করা হয় না। লেবু নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।
[৭] সম্রাট আরও জানায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত লেবু বিক্রি করে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা মায়ের কাছে তুলে দেয়। সে টাকা দিয়ে তেল-নুন, চাল-ডাল কেনার যোগাড় হয়। কখনো আবার সবাইকে না খেয়েও কাটাতে হয়।
[৮] সে জানায়, লেবু বিক্রি করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই কাঁচা বাজারের দোকানিদের দুর্ব্যবহার ও মারধরের শিকার হতে হয় বলেও অভিযোগ তাঁর।
[৯] সম্রাট জানায়, গেল কয়েকদিন ধরে বিকেল হলেন দোকান উঠাতে বলে পুলিশ, তাই বর্তমানে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়ে।
[১০] কোমলনতি এই শিশুটির বেঁচে থাকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, তার নিজের জীবন নিয়ে ভাবনা আছে, দায়িত্ব আছে, তাই তো তাকে রোজগারের জন্য ছুটতে হয়। সম্রাটের লেখাপড়ার স্বপ্ন কি পূরন হবে? নাকি সংসারের টানাপোড়নে এই স্বপ্ন হারিয়ে যাবে। সম্রাটের লেখাপড়া যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেইজন্য সমাজের বিত্তবান, সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সাহায্যের প্রয়োজন। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :