রাজধানীর যানজট কমাতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের ম্যাপে পরিবর্তন আসতে পারে। দেশের বড় তিনটি এক্সপ্রেসওয়েকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কমিটিকে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতকারী যাত্রীদের রাজধানীর যানজট এড়িয়ে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ নিশ্চিত করতে এই পরিকল্পনা করছে সরকার।
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে শুরু হয়েছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্ত ও মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের শুরুর মধ্যে দূরত্ব খুবই কম। তাই এই দুই এক্সপ্রেসওয়েকে যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। এর আগে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বুয়েটের মাধ্যমে এই বিষয়ে সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করা হবে। সেতু বিভাগ সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ মানবজমিনকে বলেন, ঢাকার বাইরের মহাসড়ক থেকে ঢাকায় প্রবেশকারী যাত্রীরা যাতে শহরের তীব্র যানজটে না পড়তে হয় সেজন্য এটি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। ঢাকা আশুলিয়া এবং ঢাকা-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এমনিতেই সংযুক্ত আছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সংযুক্ত করা।
এখন নতুন পরিকল্পনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগের পাশাপাশি মাওয়া অংশেরও সংযোগ হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল প্রকল্পের আওতায় এটি করা হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হলে বুঝা যাবে এই বাড়তি কাজের জন্য নতুন করে কেমন খরচ বাড়তে পারে এবং সময় কেমন লাগতে পারে। সম্ভাব্যতা যাচাই হয়ে গেলে অর্থাৎ প্রক্রিয়াগত কাজ শেষ হলে খুব দ্রুত এটার কাজও শুরু করা যাবে।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত হলে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ তিনটি এক্সপ্রেসওয়ে একসঙ্গে যুক্ত করা যাবে। কেননা, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় যুক্ত হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে। একইসঙ্গে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করা গেলে কমে যাবে যানজটের ভোগান্তি। ফলে ঢাকার প্রবেশমুখগুলো থেকে ঢাকামুখী মহাসড়কগুলো পার করে বেশ সহজে ঢাকায় প্রবেশ করা যাবে। সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের এই সংযোগের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর আর্থিক জোগান পাওয়া গেলে টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে সমস্যা হবে না। লোকবল বাড়িয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের আওতায় একই সময়ের মধ্যে শেষ করা যাবে। তবে এটা করতে গেলে বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিষয় রয়েছে, ভূমি সংক্রান্ত বিষয় আছে, জনগণের সুবিধা-আসুবিধার বিষয় আছে। এখানে প্রাথমিক সমীক্ষা করে যদি দেখা যায় এটা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে তাহলে এটা নিয়ে কাজ করা যাবে। তারা বলছে, সম্ভাব্যতা যাচায়ের বিষয়ে অর্থ জোগানদাতাদের সম্মতি একটি বড় বিষয়।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস মানবজমিনকে বলেন, বিভিন্ন দিক থেকে এটার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে বলা হচ্ছে। যে সকল যাত্রী বিমানবন্দর থেকে অনেক দূরে যেতে চায় তাদের জন্য এটা কার্যকরী। ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত আছে যেহেতু, এদের সঙ্গে যা কিছুই যুক্ত করা হোক, তারা একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- নির্বিঘ্নে যেন যানবাহন চলাচল করে এবং রাজধানীর ওপরে যেন চাপ কমে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে যাতে একজন যাত্রী বিমানবন্দরেও যেতে পারে, অথবা চাইলে আশুলিয়া হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকেও যেতে পারে।
অন্যদিকে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের তিনটি অংশের মধ্যে কিছু অংশের কাজ শেষ করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এই প্রকল্পের মূল রুট ছিল- হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। উন্মুক্ত করে দেয়া অংশের মধ্যে ছিল- এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ। যেটির একটি লেন নেমেছে এফডিসি মোড়ে। বাকি অংশের কাজ শেষ করতে গেলে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে আর্থিক জোগানদাতা নিয়ে। পরে প্রশাসনিক জটিলতাগুলো নিরসন করে নতুন করে কর্মী নিয়োগ হয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য। ২০২৬ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সূত্র: মানবজমিন