সুমন্ত আসলাম : পা’টা পড়ল ঠিক গলার মাঝখানে। বিরক্ত হলো রাকা, ‘দেখেছো, কোথায় পড়ে আছে!’ দরজা লাগালো ঠাস করে। একটু বেশিই কেঁপে উঠল ঝকঝকে প্রিমিওটা। দু’পা যেতেই আরও একটার ঠিক মুখের উপর। হাই হিলের হিলটা ঢুকে গেল একটা চোখে। বিরক্তির সঙ্গে এবার কান্না, ‘শিট, জুতোটার কী অবস্থা হলো। পঁচে গেছে চোখ-মুখ, তার ভেতর দেবে গেছে জুতোটা।’ স্ত্রীর জুতোর দিকে তাকাল সাজিদ। পুরো চোখটা উঠে এসেছে গোড়ালির সঙ্গে। হাতের টিস্যু দিয়ে সেটা মুছে মুচকি একটা হাসি দিল সে, ‘আজকে কয়েক জোড়া কিনবে না। বাসায় গিয়ে এটা ফেলে দিও।’
স্বর্ণধারা শপিংমলের সিঁড়ির অনেকগুলো ধাপ। প্রথম ধাপ পেরিয়ে দ্বিতীয় ধাপে ঠিক পা’টা পরল না, পরল একজনের বুকে। শরীরের সমস্ত ভরে গলা দিয়ে বেরিয়ে এলো বেশ খানিকটা কালচেটে রক্ত। ভাগ্যিস, জুতোটার এবার কিছু হয়নি। বুকের খাঁচাটা এখনো শক্তই আছে ওটার। আটাশ ধাপ পেরিয়ে, আরো নয়টা দেহ মাড়িয়ে শপিংমলে ঢুকল রাকা। ছয় ঘণ্টা তেত্রিশ মিনিট সময় নিয়ে শপিংটা শেষ করল, গাড়িতে উঠল আবার। ফিরে তাকালো বাম দিকে। আগের মতোই পড়ে আছে ওগুলো। কারো দেখার সময় নেই। জনস্রোতে থেতলে গেছে অনেকগুলো, মিশেও গেছে কারো কারো হাত-পা-মুখ-চোখ।
চোখ ফেরাল রাকা। গাড়ির ব্যাক মিররে তাকিয়ে আলতো করে চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলল, ‘কতদিন পর মার্কেটে এলাম! মার্কেটগুলো আরো আগেই খোলা উচিত ছিল।’ তারপর স্বামীর একটা হাত চেপে ধরে বলল, ‘শপিং কিন্তু শেষ হয়নি আমার। কাল আসব আবার।’ প্রশ্রয়ের একটা হাসি দিল সাজিদ, নির্ভারের দিল রাকা। কেবল জুতোটার জন্য খচখচ করছে বুকের ভেতরটা, ‘মরার আর জায়গা পেল না মানুষগুলো।’ প্রিয় বন্ধু, এটা একটা গল্পের খসড়া। ঈদের কয়দিন আগে কোনও মার্কেটের সামনে এ রকম কোনও দৃশ্যের সঙ্গে যদি গল্পের মিল হয়ে যায়, আমি দায়ী নই তার জন্য। আমি গল্পকার, জ্যোতিষী নই। জ্যোতিষীদের ভবিষ্যত-কথন মিথ্যে হয়, গল্পকারদের হয় না। কারণ গল্পকাররা কখনো বানিয়ে গল্প লেখেন না। তারা যা লেখেন, চারপাশ দেখেই লেখেন। ফেসবুক থেকে