সালেহ্ বিপ্লব : [২] করোন সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৫ মে পর্যন্ত বৃদ্ধির আদেশ জারি করেছে সরকার। এ অবস্থার মধ্যেও অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে শিল্প-কারখানা খুলতে যাচ্ছেন মালিকরা। বণিক বার্তা, প্রিয়ডটকম, আগামী নিউজ
[৩] প্রায় এক মাস গার্মেন্টসসহ সব রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা বন্ধ। বন্ধ রয়েছে দেশীয় অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী শিল্পও। ক্রেতারা বেশ কিছু অর্ডার বাতিল করেছেন। তাই কারখানা চালুর কথা ভাবছিলেন শিল্প মালিকরা। অপেক্ষায় ছিলেন সরকারের দিকনির্দেশনার, শেষ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকেও নির্দেশনা মিলেছে।
[৪] সাধারণ ছুটি বৃদ্ধিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘ওষুধ শিল্প, উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্পসহ সব কলকারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সময়ে শিল্প-কারখানা, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো ও পরিবহন পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত করা হবে ।
[৫] আবার সড়ক ও নৌপথে সকল প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল চলাচল অব্যাহত থাকার পাশাপাশি জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসগুলো খোলা থাকবে এছাড়া জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে বলেও উল্লেখ আছে প্রজ্ঞাপনে।
[৬] পরিস্থিতির উন্নয়ন হলে সঠিক সময়ে কারখানা খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। প্রথম ধাপে ২৬ এপ্রিল থেকে ৩০ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে কারখানা চালু করা হবে। এ প্রক্রিয়া চলবে ২ মে পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপে ২ মে থেকে আরো ২০ শতাংশ শ্রমিককে কাজে যোগদানের আহ্বান জানানো হতে পারে। এভাবে ৫০ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে ২১ মে পর্যন্ত কারখানা সচল রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
[৭] প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিট পোশাক খাতের শিল্প মালিকরাও। এ খাতের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কারখানা সচল করার বিষয়ে আমরাও ভাবছিলাম। সরকারের দিকনির্দেশনাও পেয়েছি। এখন পর্যায়ক্রমে অঞ্চলভিত্তিকভাবে আমরা কারখানা চালু করব। এজন্য একটা সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন অনুসরণ করা হবে।
[৮] বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, টেক্সটাইল খাতের বড় স্পিনিং মিলগুলোতে শ্রমিকদের মধ্যে পর্যাপ্ত দূরত্ব থাকে। উইভিং মিলগুলোয়ও একই অবস্থা। মিলগুলোতে এখন অত্যাধুনিক লুম। কারখানায় শ্রমিকদের অযথা আলাপচারিতা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি গ্লাভস, মাস্ক, স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা, গরম পানি ও ভিটামিন সি খাওয়ানোর বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে টেক্সটাইল মিলগুলো চালু করা সম্ভব। এগুলো নিশ্চিত করেই ধাপে ধাপে আমরা কারখানা চালু করব।
[৯] চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উৎপাদকরা বলছেন, কারখানা সচল হলে শ্রমিকরা যারা আসবেন, তাদের কোনো পরীক্ষা করা হবে না, লক্ষণ দেখেও হয়তো বোঝা যাবে না। আমাদের কারখানাগুলোয় অনবরত নিরাপদ দূরত্ব রেখে কাজ করাটাও সমস্যা। উৎপাদনে থাকলে এটা মেইনটেইন করা জটিল। আবার এটাও ঠিক আমরা যদি স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার চেষ্টা না করি তাহলে কীভাবে হবে? শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সর্বোচ্চ নিশ্চিত করা সাপেক্ষে কারখানা চালু সম্ভব বলে মত দিয়েছেন সংগঠনটির প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, সরকারের আদেশ মেনেই সচল হবে এ খাতের কারখানাগুলো।
[১০] লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি মোহাম্মদ সায়ফুল ইসলাম বলেন, ইতালি, স্পেনের মতো দেশগুলোয় কোভিড-১৯-এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। তারাও কারখানা খুলবে। আবার এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলা শুরু করেছে, মে মাসের শুরু থেকে সচল হবে। যদি কোনো কারখানা স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সাপেক্ষে চালাতে চায়, তাহলে সেখানে সরকারি কোনো বিধিনিষেধ না রেখে সুযোগ দেয়া হয়েছে।
[১১] শিল্পাঞ্চল পুলিশের তথ্যমতে, সাধারণ ছুটির প্রতিদিনই শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় অনেক কারখানাই খোলা ছিল। গতকালও সব খাত মিলিয়ে খোলা ছিল মোট ৫৭৯টি কারখানা। আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ময়মনসিংহ এলাকায় বিজিএমইএর সদস্য কারখানা খোলা ছিল ১১২টি। বিকেএমইএর সদস্য কারখানা খোলা ছিল ২২টি। এছাড়া বস্ত্র খাতের আটটি, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ২৫টি এবং অন্যান্য খাতের কারখানা খোলা ছিল ৪৩২টি। সব শিল্প মিলিয়ে ছয় শিল্প এলাকায় মোট কারখানা আছে ৭ হাজার ৬০২টি। খোলা অনেক কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।