সাইফুল ইসলাম, বাগেরহাট প্রতিনিধি : [২] করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বাগেরহাটের চিতলমারীতে করোনার ক্রান্তিকালে কিস্তি আদায় করতে এসে ‘প্রদীপন’ নামে এক এনজিও’র কর্মকর্তা জনরোষের শিকার হয়েছেন।
[৩] সোমবার (৩০ মার্চ) বেলা ১২ টায় উপজেলায় কুরমনি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।বাগেরহাটের ৯ উপজেলায় গ্রামীণ ব্যাংক কিস্তি আদায় বন্ধ করেনি। গত ২৫ মার্চও প্রতিষ্ঠানটি নির্বিঘ্নে কিস্তি উঠানোর কার্যক্রম চালিয়েছে।শুধু পৌর এলাকা নয় সারা বাগেরহাটে তারা কিস্তি আদায়ে নামেন।
[৪] ফিল্ড সুপার স্বীকার করেন যে, অফিস থেকে তাদেরকে কিস্তি আদায় না করার জন্য কোনো আদেশ দেয়নি। তাই বাধ্য হয়েই তারা কিস্তি আদায়ে নেমেছেন।এক গ্রাহক বলেন, আমরা এ দুর্যোগের সময় কিস্তি দিতে চাইনি। কিন্তু তারা বারবার বাড়িতে এসে কিস্তি আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং খেলাপির জন্য মামলার ভয় দেখিয়ে কিস্তি আদায়ের চেষ্টা করে।
[৫] এ সময় করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু হওয়া উত্তেজিত জনতা ইন্দ্রজিত রায় নামে ওই শাখা ব্যবস্থাপককে আটকে রেখে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দেন। সরকার কিস্তি আদায় বন্ধ ঘোষণা করলেও ওই এনজিও কর্মকর্তার এ রকম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছেন।
[৬] লোন গ্রহীতা ইতি বিশ্বাস জানান, তিনি এ বছরের ২৬ জানুয়ারী প্রদীপন চিতলমারী শাখা থেকে ৮০ হাজার টাকা লোন গ্রহন করেছিলেন। যার সার্ভিস চার্জ ১০ হাজার ৪৮০ টাকা এবং মাসিক কিস্তি ৮ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত যথারীতি কিস্তির টাকা পরিশোধও করেছেন। কিন্তু গত কয়েকদিন করোনার কারণে ঘর থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ থাকায় তার স্বামী কোন আয় করতে পারেননি।
[৭] এরপরও বেশ কিছুদিন ধরে ওই এনজিওর মাঠকর্মী আশ্বাব আলী কিস্তির টাকার জন্য হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু টাকা না দিলে সোমবার বেলা ১২ টার দিকে প্রদীপন চিতলমারী শাখার ম্যানেজার ইন্দ্রজিত রায় কিস্তির টাকার জন্য চড়াও হন। এ খবর পেয়ে করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু হওয়া এলাকার উত্তেজিত জনতা ওই শাখা ব্যবস্থাপককে আটকে রেখে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দেন।
[৮] একই এনজিও’র অপর লোন গ্রহীতা শিপ্রা মন্ডল ও ডলি রাণী বিশ্বাস জানান, ওই এনজিওর সুরশাইল নামে একটি সমিতি রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে মাঠ কর্মী আশ্বাব আলী ও ম্যানেজার ইন্দ্রজিত রায় কিস্তির টাকার জন্য নানা ধরণের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল।
[৯] কুরমনি গ্রামের কৃষক অনুপ বিশ্বাস, রেজাউল দাড়িয়া, রাজু বিশ্বাস, অশোক বসু, সজল বসু, আকাশ মন্ডল, বৈদ্য নাথ বসুসহ অনেকে জানান, এ উপজেলায় সাতটি ব্যাংক, ২০-২৫ এনজিও এবং ১০০ টির কাছাকাছি সমবায় সমিতি রয়েছে। গ্রামের প্রতিটি কৃষক পরিবার কমপক্ষে ৪-৬টি এনজিও’র ঋণের জালে জড়িত। সরকারি ভাবে কিস্তি আদায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও অনেক এনজিও এভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে লোন আদায় করছে। সরকারের এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলেও তারা দাবী করেন।
[১০] এ ব্যাপারে তরুণ সমাজ সেবক অনুকুল বসু জানান, অমানবিক এই ঘটনাটি শুনে তিনি সাথে সাথে ঘটনাস্থলে যান। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে অবহিত করেন বলেও উল্লেখ করেন।
[১১] প্রদীপন চিতলমারী শাখার ম্যানেজার ইন্দ্রজিত রায় জানান, সরকারি ভাবে কিস্তি আদায় বন্ধ এটা তিনি জানেন না। এছাড়া তার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তাকে চিঠি দিয়ে বা ফোন করে কোন কিছু জানায়নি।
[১২] চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম জানান, সরকারি ভাবে আগামী জুন মাস পর্যন্ত সকল ঋণ আদায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :