এম আবুল হাসনাত মিল্টন: নোবেল করোনা-১৯ ভাইরাস নিয়ে কেন এতো ভীতি। দুদিন আগে রূপা বাংলাদেশ থেকে ফোন করেছিলো। সকাল থেকে ওর জ্বর, কাশি এবং গলাব্যথা। সে খুব ভয় পেয়েছে, পাছে নোভেল করোনা-১৯ ভাইরাসে পেয়েছে বুঝি। সে ভয়ে অস্থির, তার কোভিড-১৯ হয়নি তো? খুবই ভয় পাওয়া গলায় আমারে জানালো, শুধু জ্বর নয় তার খুব অস্বস্তিও হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করি কবে তার জ্বর হয়েছিলো অথচ অস্বস্তি লাগেনি? আমি দেশের বাইরে তার সাম্প্রতিক ভ্রমণের ইতিহাস জানতে চাইলাম, জানামতে কোনো কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে কিংবা অন্য কোনো জ্বরের রোগীর সংস্পর্শে এসেছে কিনা জানতে চাইলাম। সবগুলোর উত্তরই না হওয়ায় পরামর্শ দিলাম, আপাতত অফিস ও অন্যান্য কাজে বাইরে যাওয়া বাদ দিয়ে বাসায় থাকো। আর শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক কোনো সমস্যা হলে ডাক্তারের কাছে যেও। আজ সকালে রূপা ফোন করে জানিয়েছে, ওর জ্বর কমে গেছে। সম্প্রতি আবিষ্কৃত নোভেল করোনা-১৯ ভাইরাস নিয়ে সারা পৃথিবী তোলপাড়। ১১ মার্চ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক কোভিড-১৯-এর বর্তমান অবস্থাকে ‘প্যানডেমিক’ ঘোষণা করেছেন। কোনো রোগ মহামারী আকারে যখন একাধিক দেশে হয়, বিশেষ করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার একাধিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে ‘প্যানডেমিক’ বলে।
কেন করোনা নিয়ে এই ভীতি? নোভেল করোনা-১৯ ভাইরাস নিয়ে সারা পৃথিবীতে জনমনে ব্যাপক ভীতি দেখা দিয়েছে। এই ভীতির কারণ কী? এর আগে একই রকমের সার্স, মার্স রোগ দেখা দিলেও তা করোনার মতো এতো ব্যাপ্তি পায়নি। চীন থেকে এই অসুখে যেভাবে আমরা মৃত্যুর খবর পাচ্ছিলাম, তাতে শুরুতেই আতঙ্কিত বোধ করেছি। তারপর এই অসুখ ছড়িয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। তাছাড়া, এবারের ভীতির কারণসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো এই ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে সংস্পর্শে আসা মানুষের শরীরে খুব দ্রুত ছড়ায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা যাকে বলি ‘ব্যাসিক রিপ্রোডাকশন রেশিও (বিআরআর), যা এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে অনেক বেশি।
দ্বিতীয়ত, কারও শরীরে নোভেল করোনাভাইরাস-১৯ প্রবেশ করলে কী হয়? এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর ওই ব্যক্তি কতটা আক্রান্ত হবেন, তা প্রধানত নির্ভর করে তার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। একজন সুস্থ-সবল মানুষের দেহে এই ভাইরাস প্রবেশ করলে দেখা যায় তার শরীরে সামান্য জ্বর বা কাশি হতে পারে, যা অনেকটা ঠা-া জ্বরের মতো।
সমস্যা প্রকট হয় যখন আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়। যেমন কারও যদি অ্যাজমা বা হাঁপানি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকে বা ক্যান্সারাক্রান্ত রোগী যাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক বয়স্ক মানুষের সাধারণত এসব অসুখের কারণে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। ফলে নোভেল করোনাভাইরাস তাদের শরীরে ঢুকে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করতে পারে, এতে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যেসব দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি, সেসব দেশে তাই কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের মৃত্যুহার বেশি হবে। তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শতকরা আশিভাগ লোকই কোনো চিকিৎসা ছাড়াই বা সামান্য চিকিৎসায়ই ভালো হয়ে যায়।
বাকি ১৫-১৮ শতাংশ লোক হাসপাতালে বা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠে। আক্রান্তদের প্রায় চার-পাঁচ শতাংশ রোগীর অবস্থা বেশ জটিল হয়, যাদের অনেকের চিকিৎসার জন্য আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে। কেবল দুই শতাংশের মতো মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তবে নভেল করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যে জানা যাচ্ছে যে, এই ভাইরাস বারবার তার জিন বদলাচ্ছে এবং এর ফলে ক্রমাগত ভাইরাসটি আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। বারবার পরিবর্তনের ফলে নোবেল করোনা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ভ্যাক্সিন তৈরি করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। শুরু হলো করোনা নিয়ে আমার লেখালেখি। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে গল্পের মতো করে লেখার চেষ্টা করেছি। আশা করছি চার পর্বের মধ্যেই প্রয়োজনীয় কথাগুলো বলতে পারবো। এটা লিখতে গিয়ে আমি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত বড় কর্মকর্তা, তাদের ওয়েবসাইট আর একজন জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষক হিসেবে আমার দীর্ঘ চব্বিশ বছরের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করেছি। খুব ভারি কোনো কথা বা তথ্য নেই, তবে লেখাগুলো দেশের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে আমজনতার জন্য কাজে লাগবে বলে আমার ধারণা। ফেসবুক থেকে