শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ মা হিসেবে পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়ে দেশের ইতিহাসে নাম লেখালেন অভিনেত্রী বাঁধন ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৩:৩৪ রাত
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৩:৩৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্যাংকের মুনাফা বাড়ানোর লক্ষ্যে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বাড়াতে মরিয়া ব্যাংক

ডেস্ক রিপোর্ট : দুই বন্ধু। একজন ব্যাংকার, অন্যজন বেসরকারি চাকরিজীবী। চতুর্থ প্রজন্মের একটি ব্যাংকে কর্মরত ব্যাংকার বন্ধু এ মাসের শুরুতে তাঁর ব্যবসায়ী বন্ধুকে ফোন করে একটি ক্রেডিট কার্ড নিতে অনুরোধ করেন। ব্যাংকার বন্ধুর অনুরোধের ভাষ্য ছিল—তোকে একটি ক্রেডিট কার্ড নিতেই হবে। প্রয়োজনে সেটি চালু না করলেও চলবে। চালু না করলে তো কেনাকাটা বা সুদ দেওয়ার প্রশ্ন আসবে না। মো. জাকির হোসেন নামের ওই ব্যবসায়ী সম্প্রতি এসব কথা বলেন।কালের কণ্ঠ

শুধু চতুর্থ প্রজন্মের ওই ব্যাংকই নয়, চলতি বছরের শুরু থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সব প্রজন্মের ব্যাংকই ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বাড়াতে হন্যে হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক তাদের প্রত্যেক কর্মীকে টার্গেট দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। কার্ড শাখার পাশাপাশি অন্য শাখার কর্মীদেরও এই টার্গেট দেওয়া হয়েছে।

১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ কার্যকর হবে। একই সঙ্গে সব ধরনের আমানতের সুদহারও হবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। ৯-৬ সুদ কার্যকরে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠকের পর এমনটি জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তখন বলা হয়েছিল, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলার জারি করা হবে।

সূত্র বলছে, অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর থেকেই ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বাড়াতে তোড়জোড় শুরু করেছে ব্যাংকগুলো। কারণ সিঙ্গেল ডিজিটের বাইরে থাকায় কেবল ক্রেডিট কার্ডেই ব্যাংকের মুনাফা বেশি করার সুযোগ আছে। এ জন্য ব্যাংকের সব কর্মকর্তাকে টার্গেট দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চতুর্থ প্রজন্মের ওই ব্যাংকের প্রত্যেক কর্মকর্তাকে ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতি মাসে দুটি ক্রেডিট কার্ড বিক্রির টার্গেট দেওয়া হয়েছে। প্রথম প্রজন্মের আরেকটি ব্যাংক জানুয়ারি মাস থেকে প্রত্যেক কর্মীকে একটি করে ক্রেডিট কার্ড বিক্রির টার্গেট দিয়েছে। আর কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তাদের প্রতি মাসেই ১৮-২০টি কার্ডের টার্গেট দেওয়া হয়েছে, যা আগে আরো কম ছিল। এ ছাড়া আরো কিছু ব্যাংক তাদের কর্মীদের ক্রেডিট কার্ডের টার্গেট দিয়ে মাঠে নামিয়েছে। বর্তমানে ৩৯টি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সেবা রয়েছে।

জানা যায়, বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডের সুদ অন্য যেকোনো ঋণপণ্যের তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমানে বেসরকারি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সুদহার গিয়ে উঠেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। আছে নানা রকম চার্জের ধকলও। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ড নিলে সেটি চালু না করলেও বছর শেষে ঠিকই নির্দিষ্ট অঙ্কের চার্জ গুনতে হবে গ্রাহককে। তবে এ সেবায় বেশি সুদ ধার্যের বিষয়ে ব্যাংকগুলোর যুক্তি হলো, ক্রেডিট কার্ডে ঋণ সেবাটি ব্যাংকের অন্যান্য সেবার মতো নয়। জামানতবিহীন ঋণ হওয়ায় এ ক্ষেত্রে খেলাপির ঝুঁকি অনেক বেশি। কিছু গ্রাহক ক্রেডিট কার্ডে টাকা ঋণ নিয়ে ওই কার্ড আর ব্যবহার করেন না। ফলে এ সেবার গ্রাহকদের নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধান করতে হয়। ফলে এ সেবায় সুদহার বেশি হয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এ সেবার সুদহার বেশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি  বলেন, সব ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর করা ব্যাংকগুলোর পক্ষে অনেক কঠিন। এমন বাস্তবতায় ব্যাংকগুলো আগাম প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। ক্রেডিট কার্ড যেহেতু সিঙ্গেল ডিজিটের বাইরে থাকছে, সেহেতু এ সেবা সম্প্রসারণে মনোযোগী হচ্ছে ব্যাংকগুলো। এতে দোষের কিছু নেই বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, বর্তমানে অন্য যেকোনো ঋণের সর্বোচ্চ সুদের সঙ্গে ৫ শতাংশ সুদ যোগ করে ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণের সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। যদিও সব ব্যাংক সুদহার নির্ধারণের এই বাধ্যবাধকতাও মানছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬০টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ৩৫টি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে বেসরকারি ৩১টি, বিদেশি দুটি ও সরকারি দুটি ব্যাংক রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে বেসরকারি ও বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ডের গড় সুদহার ছিল ১৮ থেকে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত। আর সরকারি দুটি ব্যাংকের ছিল সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ।

ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ড ব্যবসা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু পরিচালনা এবং এ সেবার ঝুঁকিগুলো আরো কার্যকর ও ফলপ্রসূভাবে মোকাবেলা এবং গ্রাহক স্বার্থ রক্ষার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নীতিমালা রয়েছে, যা ২০১৭ সালের ১১ মে জারি করা হয়। ওই নীতিমালার আওতায় ক্রেডিট কার্ডের সেবা পরিচালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক ছিল ১৫ লাখেরও বেশি। চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক ২০ লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়