গত বছরের ৪ আগস্ট নতুন সরকার গঠনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন নাহিদ ইসলাম। একইসঙ্গে তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনে প্রস্তাব দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চে এ জবানবন্দি দেন নাহিদ।
জবানবন্দিতে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা গত বছরের ৪ আগস্ট শাহবাগে অবস্থান ও বিক্ষোভ করি। ওই দিনই ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করি। তবে সেদিন কারফিউ ঘোষণা করে দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় সবকার। আমা জানতে পারি, ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এছাড়া আমাদের হত্যা বা গুম করা হতে পারে। এজন্য আমরা মার্চ ঢাকা কর্মসূচি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করি।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে নাহিদ বলেন, আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মিডিয়া সংস্কার হয়নি। যদিও আমিও দায়িত্বে ছিলাম। মিডিয়া এখনও নিয়ন্ত্রিত বলে আমি মনে করি। ডিজিএফআই আগে যেভাবে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ বা বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ করতো, এখনও সেই চর্চা রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দিয়েছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম এই সংগঠক।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাইয়ে আন্দোলনকারী নেতাদের গ্রেফতারের পর তাদের আন্দোলন প্রত্যাহারে চাপ দিয়েছিল শেখ হাসিনা প্রশাসন। ১৬ জুলাই থেকেই হত্যাযজ্ঞের প্রকৃত তথ্য প্রকাশ এবং আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি তুলে ধরা থেকে বিরত ছিল গণমাধ্যম।
তিনি আরও বলেন, আমি যে সময়টুকু দায়িত্বে পেয়েছিলাম, আমরা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছিলাম। তাদের দায়িত্ব ছিল পুরো বিষয়টা সংস্কার প্রস্তাবনা করে সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে হওয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার পর্যালোচনা নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যেন এসব মামলা প্রসঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। তারা সুপারিশও করেছিল। বাকিটা আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল। অর্থাৎ সংবাদকর্মী হিসেবে যারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন,তাদের বিচারের আওতায় আনার।
এদিন বেলা সোয়া ১১টা থেকে ট্রাইব্যুনালে ৪৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন নাহিদ ইসলাম। দুপুরে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিরতি দেওয়া হয়। এরপরই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম এ নায়ককে জেরা করবেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, মামুনুর রশীদসহ অন্যরা।
এ সময়, শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান কামালসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা জুলাই গণহত্যার জন্য দায়ী বলেও সাক্ষ্য দেন নাহিদ। সেইসঙ্গে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান তিনি।
এর আগে, বুধবারের জবানবন্দিতে জুলাই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী-ছাত্রলীগের দমনপীড়নের বর্ণনা দেন নাহিদ ইসলাম।
অপরদিকে, রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি ও আরও দুজনকে হত্যা মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আজ আদেশ দেবেন ট্রাইব্যুনাল।