বাকী বিল্লাহ : ১৯৯৬ বা ২০১০ সালে শেয়ারবাজার থেকে রাতারাতি পুঁজি হারিয়ে ফতুর হয়ে গিয়েছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, এবারের ঘটনা একটু অন্য রকম। একটু একটু করে তিলে তিলে সর্বস্বান্ত হয়েছেন তারা। সম্প্রতি একদিনেই বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের ১৩ জানুয়ারি থেকে সাম্প্রতিক সময়কালে শেয়ারবাজারের মূলধন কমেছে মোট ৯৫ হাজার কোটি টাকা। এগুলো সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের টাকা।
তারা আশা করেছিলেন, বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এবং তারা যতোটুকু সম্ভব লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন। তাদের এই প্রত্যাশায় অতিরঞ্জন ছিলো না মোটেও। গত দুই বছরে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম এতো নিচে নেমে গিয়েছিলো ওখান থেকে আরও নেমে এটা যে তলানিরও নিচে গড়াবে, তা ধারণা করেননি কেউ। ধারণার অতীত সেই ঘটনাই ঘটেছে। বাজারের সূচক এখন এমন অবস্থায় যে ডিএসসির ভবনটিকেই হয়তো নিলামে চড়া লাগবে। ৯৬, ২০১০ বা ২০১৯ বিপর্যয়ের সবগুলো ঘটনাই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। এর অন্যথা হওয়ার কথা ছিলো না আসলে। বিগত বছরগুলোতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এতো বেশি জঘন্য ছিলো যার সঙ্গে মাৎস্যন্যায় ছাড়া আর কোনো কিছুর তুলনা চলে না। আর তথাকথিত উন্নয়নের প্রোপাগা-া যে পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গিগত জায়গা থেকেও সম্পূর্ণ ফলস তা তো স্টক মার্কেটের দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে। ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা, লুটপাট নিয়ে বছরের পর বছর ধরে এতো এতো কথা হচ্ছে কিন্তু সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রমাগত লুটপাটকারীদেরই সহযোগিতা করে গেছে। আদতে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং লুটপাটকারী এ তিন মিলেই একটা চক্র।
প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের কেসটাই দেখেন। সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে গুছিয়ে আর্থিক খাত থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে সে। কোনো অ্যাকাউন্টে ৫ লাখ (বা ১০ লাখ) টাকার বেশি ক্যাশ জমা হলে সেটাকে সন্দেহজনক ধরে নিয়ে অনুসন্ধান করার কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের। পিকে হালদারের মা অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক লীলাবতী হালদারের নামে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে জমা ছিলো ২৪০ কোটি টাকা। সেই টাকা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুক্ত ছিলেন বলে প্রথম আলোর রিপোর্টে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনÑ এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখের সামনে সব কিছু ঘটেছে। সরকার কোথায় ছিলো? সেই প্রশ্ন করে কিছু খুঁজে পাবেন না। খুঁজতে গেলে ডাকাতদলের ভিতরে মুখ ঢাকা মানুষগুলোর মুখোশের দিকে তাকাতে হবে। মুখোশগুলো উন্মোচন করা হলে ওখানে সরকারকেও পাওয়া যাবে। কী ভয়াবহ পরিস্থতি। চিন্তা করলে হাত-পা ঠা-া হয়ে যায়। ডাকাতদের তো বহুদিন ধরে চেনা যাচ্ছে। কিন্তু তাদের হাত থেকে মুক্তির উপায় পাওয়া যাচ্ছে না। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :