রাশিদুল ইসলাম: [২] ভারতে ইভিএমে পড়া ভোটের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কাগজ মিলিয়ে দেখার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ১০০টির বেশি আর্জি জমা পড়েছিল। তার মধ্যে ছিল বিরোধী দলগুলির আবেদনও। লোকসভা ভোটপর্বের মাঝেই সমস্ত ভোটের বুথে ইভিএমের ফলের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কাগজ মিলিয়ে দেখার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। পারসটুডে
[৩] ভিভিপ্যাট পদ্ধতির মাধ্যমে কাগজের স্লিপ-সহ বৈদ্যুতিক ভোটযন্ত্রে (ইভিএম) পাওয়া ভোটের ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের (ক্রস-ভেরিফিকেশন) দাবিতে ওই আর্জির শুনানির পরে শুক্রবার এই নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ। তবে বেঞ্চ জানিয়েছে, ভোটের ফলঘোষণার সাত দিন পরে নির্দিষ্ট অঙ্কের ‘ফি’ জমা দিয়ে ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনার আবেদন জানানো যেতে পারে।
[৪] ভারতের ১০০ শতাংশ বুথে ইভিএমের ফলের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কাগজ মিলিয়ে দাবি বিরোধিতা আগেই করেছিল নির্বাচন কমিশন। তারা বলেছিল, সমস্ত বুথে ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কাগজ মিলিয়ে দেখতে হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া আবার ব্যালট পেপারের জমানায় পিছিয়ে যাবে। গত বুধবার এই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চও কিছুটা কমিশনের সুরেই কথা বলে। শীর্ষ আদালত জানায়, তারা নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপও করতে পারে না। সেই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই শুক্রবার এ সংক্রান্ত রায় ঘোষণা করেছে শীর্ষ আদালত।
[৫] প্রসঙ্গত, ইভিএমে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া হল কি না, ভিভিপ্যাট স্লিপের মাধ্যমে তা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ রয়েছে ভোটারের। কিন্তু নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে কাজ করা সংস্থা, অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মসের (এডিআর) অভিযোগ, প্রতিটি বিধানসভায় ২০০টি ভিভিপ্যাট মেশিন থাকলেও পাঁচটির বেশি গণনাই করা হয় না! সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলার শুনানিতে এডিআরের আইনজীবী নিজাম পাশা গত সপ্তাহে বলেন, ‘‘ভিভিপ্যাট স্লিপ সংগ্রহ করে ব্যালট বাক্সে ফেলার সুযোগ দেওয়া উচিত ভোটারদের। জালিয়াতির সম্ভাবনা আটকাতে প্রতিটি ভিভিপ্যাট স্লিপ গণনা করা উচিত।’’
৬] সংস্থার আর এক আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এই মামলার শুনানিতে জানিয়েছিলেন, ইউরোপের অধিকাংশ দেশই ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট করাতে শুরু করেছে। ফলে ভারতেও ব্যালটে ফিরে যাওয়া যেতে পারে, অথবা ভিভিপ্যাট স্লিপ ভোটারদের হাতে দেওয়া হোক। তারা সেটি ব্যালট বাক্সে জমা করবেন। কিন্তু সেই ব্যবস্থায় ভোটারের পছন্দের গোপনীয়তা রাখার গণতান্ত্রিক অধিকার বজায় থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি খন্না।
[৭] ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর সেই ভোট সঠিক জায়গায় পড়ল কি না তা দেখিয়ে দেয় ভিভিপ্যাট। ভোট দেওয়ার সাত সেকেন্ডের মধ্যে একটি কাগজ প্রার্থীর নাম প্রতীক-সহ বেরিয়ে আসে মেশিন থেকে। তবে সেই কাগজ প্রার্থীদের হাতে যায় না। জমা হয় একটি পাত্রে। এত দিন নিয়ম ছিল, প্রতিটি এলাকা থেকে যে কোনও পাঁচটি বুথ বেছে নিয়ে সেখানে ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের কাগজের হিসাব মিলিয়ে দেখার। বিরোধী দলগুলি এবং বিভিন্ন নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার সংস্থা ১০০ শতাংশ বুথে এই পদ্ধতি চালু করার আবেদন জানিয়েছিল।
[৮] গত বুধবার এই মামলার শুনানিতে নির্বাচন কমিশনকে চারটি প্রশ্ন করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেগুলো হচ্ছেঃ ৮.১ সমস্ত ভিভিপ্যাটেই কি মাইক্রো কন্ট্রোলার ইনস্টল করা আছে? ৮.২ এই মাইক্রো কন্ট্রোলারকে কি এক বারই প্রোগ্রাম করা যায়? ৮.৩ নির্বাচন কমিশনের কাছে কতগুলি সিম্বল লোডিং ইউনিট রয়েছে? এবং ৮.৪ নির্বাচনী হলফনামা জমা দেওয়ার সময় ৩০ দিন। আর সমস্ত রেকর্ড ৪৫ দিন পর্যন্ত মজুত করা থাকে। এই ভ্রম সংশোধন করা দরকার।
[৯] বেঞ্চ এই চার প্রশ্নের জবাব চেয়ে বলেছে, ‘আমরা এই উত্তরগুলি জানতে পারলে আমাদের হাতে সমস্ত তথ্য থাকবে সঠিক রায় দেওয়ার জন্য।’ শুক্রবার রাতে এল সেই ‘সঠিক রায়’।
আপনার মতামত লিখুন :