শাহীন খন্দকার : চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন জেলা শহরে অবস্থিত দর্শনা কুষ্টিয়া রেলপথের একটি রেলস্টেশন।এটি জয়নগর ও মোমিনপুর রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যবর্তী স্টেশন। এটি বাংলাদেশের সীমান্ত ট্রানজিট পয়েন্ট দর্শনা জাংশন থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে-এবং কুষ্টিয়া থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। চুয়াডাঙ্গা স্টেশন ১৮৬২ সালে চালু হয়। লোকবলের অভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলার ৫টি রেলওয়ে স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
জেলার মোট ১০টি রেলস্টেশনের মধ্যে চালু আছে ৫টি। এ ৫টি খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে।যে ৫টি রেলস্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তা হলো, আনসার-বাড়িয়া, উথলী জয়রামপুর, মোমিনপুর ও মুন্সিগঞ্জ। এসব স্টেশনে লাইনম্যান, পয়েন্টম্যানস, গেটম্যান নেই। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।বাকিগুলোতেও নেই কোনো যাত্রীসেবা, টিকেট না পাওয়ার বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রফিক জানান, ‘আন্তঃনগর ট্রেনে তিন জেলার যাত্রীর চাপ থাকলেও এখান থেকে টিকেট পাওয়া যায়না। তিনি বলেন যাতায়াতের জন্য এ টিকেটগুলো বেশি দামে যশোর ও খুলনা থেকে কিনতে হয় যাত্রীদের।
এখান থেকে টিকেট বিক্রি হলে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে। টিকেট বিক্রির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন রেল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করে তিনি জানান, গত জুন মাসে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে যাত্রীদের কাছে ৬০ লাখ ৮৯ হাজার ৯২৪ টাকা, জুলাই মাসে ৫৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৬ টাকা ও আগস্ট মাসে ৬২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭১ টাকার টিকেট বিক্রি হয়েছে।
মঙ্গলবার রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেকটি রেলস্টেশনের কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে খুব দ্রুতই চালু করা হবে আশ্বাস মিলেছে । ওই কর্মকর্তা জানান চলমান সংকট সমাধানে ইতিমধ্যে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ট্রেনিংয়ে আছেন, ট্রেনিং শেষ করে উল্লেখিত স্টেশনে যোগদান করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
তবে বেসরকারি যে সব ট্রেন এই রুটে যাত্রী ওঠানামা করায় চাপ রয়েছে টিকেট বিক্রিতে। টিকেট সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ওপরের ব্যাপার। এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না। এদিকে গেটম্যান আব্দুল গনি বলেন, ‘খুব সমস্যার মধ্যেই এ দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এসব দেখার কেউ নেই।
ইতিহাস ঘঁটে জানা গেছে, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাদের ব্যবসা প্রসারে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানি (চিনিকল) এবং কুষ্টিয়ার জগতিতে আরো একটি চিনিকল গড়ে তোলে। বৃটিশ শাসনামলে ১৮৬২ সালে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে রেলপথ যোগাযোগ সৃষ্টি করতে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করা হয়। দর্শনা থেকে আলমডাঙ্গা হয়ে রেলপথটি জগতি স্টেশনে গিয়ে শেষ হয়।
এই রেলপথে প্রতিদিন ১২টি আন্তঃনগর, ৬টি মেলট্রেন ও সপ্তাহে ৪ দিন ঢাকা-কলকাতার মধ্যে মৈত্রী ট্রেন চলাচল করে থাকে। গাড়ি ভাড়ার চেয়ে ট্রেনের ভাড়া অনেক কম, বন্ধ হয়ে যাওয়া রেল স্টেশনগুলো সংস্কার করে বেশি ট্রেনচালু করলে জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধা হয়।স্থানীয়দের উৎপাদিত দ্রব্যাদি রেলপথে বিভিন্ন মাল আমদানি-রপ্তানি করা সুবিধা হয়। এতে রেলপথ লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয়দের অভিযোগ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রেলের সম্পদ চুরি হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্টেশনের পতিত গোডাউনে মাদকসেবীদের স্বর্গরাজ্যেপরিণত হয়েছে। চলছে হরিলুট ও জবরদখল। সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া আনছারবাড়িয়ার রেলস্টেশনের মূল্যবান গাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে। মোমিনপুর স্টেশনের কাঁঠাল গাছের ডাল কেটে নিয়ে গেছে রাতের অন্ধকারে কে বা কারা।