বদরুল হক, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট প্রকটাকার ধারণ করেছে। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে চিকিৎসকসহ জনবলের অভাবে রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। এতে এ এলাকার কয়েক লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।
জানা গেছে, চিকিৎসক ও জনবল সংকটে এ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু করা যাচ্ছে না। প্রসবজনিত সমস্যাসহ অপারেশনের রোগীদের শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়।
এতে হতদরিদ্র, বিত্তহীন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের রোগীসাধারণ আর্থিক সংকটসহ সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, আনোয়ারা সাড়ে ৩ লাখ লোকের একমাত্র ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০০৯ সালের ৩১ শয্যা থেকে এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। জনবলসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করায় অন্তহীন সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
চিকিৎসক সংকটে গুটিকয়েক ডাক্তার রোগীর চাপে হাঁপিয়ে উঠছেন। তাদের পক্ষে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যারা কর্মরত আছেন তারাও নিয়মিত কর্মস্থলে থাকছেন না।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। এ সময় ডাক্তার ও এসএসএমওদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে দেখা যায়। এখানে শুধুমাত্র বহিঃর্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩শ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তাছাড়া, ৬০ থেকে ৭০ জন মা ও শিশু ভ্যাকসিন সেবা নিয়ে থাকেন। তবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বের হলে বিভিন্ন কোম্পানীর মেডিকেল রি-প্রেজেন্টেটিভরা ঘিরে ধরেন। তারা মোবাইলে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছেন। এতে রোগীরা অতিষ্ট হয়ে পড়লেও বিষয়টি কেউ আমলে নিচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ চিকিৎসা কর্মকর্তার ২১টি পদের মধ্যে ৮টিই শূন্য। মেডিসিন, এ্যানেসথেসিয়া, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন রোগ, চক্ষু, অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদগুলো শূন্য থাকায় রোগী সাধারণ চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন।
ডেন্টাল সার্জনের পদও শূন্য। ১২ জন মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জনের স্থলে ৪ জন অফিসিয়ালি কর্মরত থাকলেও ২ জন দীর্ঘদিন ধরে অননুমোদিত অনুপস্থিত রয়েছে।
হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ ডাক্তার ও এসএসএমওগণ কোনোমতে রোগীদের সেবা দেয়ার কাজ চালাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, ২ জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ক্যাশিয়ার, ভান্ডার রক্ষক, ৩ জনের মধ্যে ২ জন ল্যাবরেটরী এটেনডেন্ট, ৩ জন ফার্মাসিস্ট, কম্পাউন্ডার, কার্ডিওগ্রাফার, ইমার্জেন্সী এটেনডেন্ট, বাবুর্চি, মশালচি, ৩ জন ওয়ার্ডবয়, ২ জনের মধ্যে ১ জন আয়া, মালি, ২ জন নিরাপত্তা কর্মীর ১ জন ও ৫ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ শূন্য রয়েছে।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়,৫ বৎসর যাবৎ এক্স-রে মেশিন,ইসিজি মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে, প্যাথলজি বিভাগের সম্পূর্ন কাজ বন্ধই আছে দীর্ঘাদন ধরে।
কোন রোগীকে ডাক্তার এক্সরে অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষা দিলে তাহা চড়া দামে বাহির থেকে করে নিতে হয়।এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৬৫ বৎসরের কাসেম নামের বৃদ্ধ বলেন,সকাল ৯টা থেকে লাইনে দাড়িয়েছি ২ঘন্টা যাবত এখনো ডাক্তার দেখাতে পারি নাই,তিনি আরও বলেন,এখানে ডাক্তার না দেখিয়ে কষ্ট ও টাকা খরচ হলেও প্রাইভেট ডাক্তার দেখিয়ে এতক্ষন বাড়িতে চলে যেতে পারতাম।
আর এই হাসপাতালে কোন প্যাথলজি সেবা দিতে পারে না। এম্বুলেন্সটি জরুরী ভিত্তিতে কোন রোগীকে চট্রগ্রামে শহরে নিতে চাইলে এম্বুলেন্সটি প্রায় সময় বিকল থাকে ।
কাঙ্খিত সেবা থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীরা স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। চট্রগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান ছিদ্দিকি এ বিষয়ে বলেন, জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক জনবল প্যাথলজি সংকট রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে চিকিৎসক সংকট কেটে উঠবে।
কিন্তু পুরো জেলায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর প্রায় পদ খালি রয়েছে। এ পদগুলো পূরণে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবু জাহিদ মোহাম্মদ সাইফুউদ্দিন বলেন, চিকিৎসকসহ জনবল এবং অন্যান্য সমস্যা থাকলেও আমরা রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
চিকিসৎসা সেবা ও জনবলসহ নানা সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি সহসা এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। শূন্য পদগুলো পূরণ হলে আমরা সঠিকভাবে রোগী সাধারণকে উন্নত সেবা দিতে সক্ষম হবো সম্পাদনা:
জেরিন আহমেদ