প্রভাষ আমিন : সত্যি বলতে কী আবরারের স্ট্যাটাসটিতে আমি অপরাধ তো দূরের কথা বিদ্বেষমূলক কিছুও খুঁজে পাইনি। বরং আমি মুগ্ধ হয়েছি। স্ট্যাটাসের ছত্রে ছত্রে আমি একজন দেশপ্রেমিককে খুঁজে পেয়েছি। বাংলাদেশে অনেক ভারতবিদ্বেষী আছে, অনেক পাকিস্তানবিদ্বেষী আছে। ভারতবিদ্বেষীরা ভারত প্রসঙ্গ এলেই লিখে রেন্ডিয়া, পাকিস্তনবিদ্বেষীরা পাকিস্তান প্রসঙ্গ এলেই লেখে ফাকিস্কান’। কিন্তু আবরার একটিও গালি বা বিদ্বেষমূলক শব্দ না লিখে শৈল্পিকভাবে বাংলাদেশের স্বার্থের কথা লিখেছে। তার দেশপ্রেমে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তার মতো তথ্য দিয়ে একটি স্ট্যাটাস লিখতে পারলে আমি নিজে গর্বিত হতাম। আবরারের শেষ স্ট্যাটাসটি দুই লাখ বত্রিশ হাজার মানুষ লাইক করেছেন, চুয়ান্ন হাজার মানুষ শেয়ার করেছেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক খোন্দকার মুনীরুজ্জামান এটিএন নিউজের টকশোতে দাবি করেছেন, আবরারের স্ট্যাটাস নিয়ে গণভোট হলে শতভাগ মানুষ তার পক্ষেই ভোট দেবে। এটাই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ। আমার মনে হয়েছে, এটি আমারই স্ট্যাটাস। আমিই আবরার।
আবরারকে কারা হত্যা করেছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। আবরারের বাবা উনিশজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এরই মধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত বারো আসামিসহ তেরোজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা আবরারকে পিটিয়ে মেরেছে, তারা তো অবশ্যই দোষী।
কিন্তু দায় আছে আমাদের সবার। প্রতিবাদহীনতার এবং চুপ থাকার এক ভয়ংকর সময় আমরা পার করছি। সাত ঘণ্টা ধরে আবরারকে পেটানো হলো, তার চিৎকার কী হলের আর কারও কানে যায়নি? আজ যারা আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছে, সেদিন যদি তারা সংগঠিত হয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতো, তাহলে হয়তো বাঁচানো যেতো। কিন্তু বুয়েটের শেরে বাংলা হলের শিক্ষার্থীরা সবাই চুপ করেছিলো। কেন? আমি জানি, ছাত্রলীগের ভয়ে সবাই চুপ করেছিল। সবারই জানের মায়া ছিলো। কিন্তু ভয়কে জয় করতে না পারলে, আমরা কেউই এই দানবদের হাত থেকে বাঁচতে পারবো না। আবরার ফাহাদ মুজাহিদের ফেসবুক প্রোফাইলে নিজের সম্পর্কে একটি লাইন লেখা আছে, ‘অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা অসীম মহাকাশের অন্তে’। আহারে আমাদের সবাইকে অপরাধী করে আবরারকে মাত্র একুশ বছর বয়সেই অসীম মহাকাশের অন্তে অনন্ত মহাকালে যাত্রা করতে হলো। ফেসবুক থেকে