শিরোনাম
◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন

প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০২:৩৬ রাত
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ০২:৩৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রামের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে অপমৃত্যুর মিছিল

আমিন মুনশি : চট্টগ্রামের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে গত আট মাসে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৬ জন শ্রমিক। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩০ জনেরও বেশি। অন্যদিকে ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিন বছরে ইয়ার্ডগুলোতে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মোট ৫০ জন শ্রমিক। ‘জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম’ নামের একটি সংগঠন বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনায় জাহাজভাঙা শিল্পের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক এএম নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিন বছরে মোট ৫০ জন শ্রমিক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। চলতি বছরের আট মাসে ১৬ জন শ্রমিক নিহত এবং ৩০ জনের বেশি মারাত্মকভাবে আহত হন। এছাড়া আগুনে দগ্ধ ও গ্যাস বিস্ফোরিত হয়ে নয়জন এবং প্লেট চাপা পড়ে পাঁচজন মারা যান।’

এএম নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বঙ্গোপসাগর উপকূলে ১৫০টির বেশি শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের নিবন্ধন আছে। কিন্তু কাজ চলছে ৫০ থেকে ৬০টি ইয়ার্ডে। এসব কারখানায় সরাসরি কাজ করে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক। পরোক্ষভাবে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।’

লিখিত বক্তব্যে ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক সফর আলী বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনায় শিপ ইয়ার্ডে নিহত ও আহত শ্রমিকদের সংখ্যা এবং আহতদের অবস্থা নিয়ে লুকোচুরি খেলা চলে। বছরের পর বছর ধরে জাহাজভাঙা শিল্প খাতে দুর্ঘটনা এবং শ্রমিকের মৃত্যুর হার ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেলেও দায়ী মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এ যাবত কোনো মালিকের বিরুদ্ধে মামলা বা হুলিয়া হয়েছে এমনটা আমাদের জানা নেই। অস্থায়ী ভিত্তিতে ঠিকাদারের অধীনে কাজ করে বিধায় শ্রমিকরা আহত বা নিহত হলে অনেক ইয়ার্ড মালিক শ্রমিকদের দায়ও নেয় না।’

সফর আলী বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মস্থলে নিহত শ্রমিকদের দুই লাখ টাকা এবং এর সাথে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত ক্রাইসিস কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরও পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও তা সকল নিহত শ্রমিকের পরিবার পাচ্ছে কিনা তার কোনো তদারকি নেই। এই শিল্প বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে পরিচালিত হলেও এ খাতের শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। শ্রম আইনে মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ কার্যকর বাধ্যতামূলক হলেও মালিকরা তা মানছেন না।’

ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত বলেন, ‘২০০৯ সালের হংকং কনভেনশন অনুসারে প্রতিটি পুরনো জাহাজ বর্জ্যমুক্ত করে রিসাইক্লিং করতে হবে। কিন্তু অতি মুনাফার লোভে জাহাজ বিক্রেতা বা ক্রেতা কেউ তা আমলে নিচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ পরিবেষ্টিত পরিবেশে শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি ও জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল ঝুঁকি থাকে। হতদরিদ্র জাহাজ ভাঙা শ্রমিকদের কাছে কোনো বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা এ পেশা বেছে নেয়। বছরের পর বছর এ সুযোগটাই নিচ্ছে মালিকপক্ষ।’

সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চলতি বছর সংঘটিত সব দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন এবং দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, শ্রমিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেওয়া, শ্রমিকদের তথ্য সংরক্ষণ, কাটার আগে জাহাজ পূর্ণাঙ্গভাবে বর্জ্যমুক্ত করা, শ্রমআইন-বিধিমালা ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন মেনে ইয়ার্ড পরিচালনা, ইয়ার্ডে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা, মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ অনুসারে ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা মাসিক মজুরি ও ৬১৫ টাকা দৈনিক মজুরি নিশ্চিত করা এবং ইয়ার্ডগুলো নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি।

এসব দাবি বাস্তবায়নে আগামী সাতদিনের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়