শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১১:৩২ দুপুর
আপডেট : ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১১:৩২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চলমান রোহিঙ্গা সংকটের ২ বছর, পরিস্থিতি জটিল-প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত

খালিদ আহমেদ : কয়েক দশক ধরেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক রোহিঙ্গা মুসলমানরা নিজ ভূমিতে পরবাসী হয়েছিল। আইন করে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তাদের নাগরিকত্ব। নানা বৈষম্যমূলক নীতি ও উসকানির মাধ্যমে তাদের সঙ্গে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর দূরত্ব ক্রমেই বাড়িয়ে তোলা হচ্ছিল। সমকাল, যুগান্তর, আমাদের সময়

কর্মহীন, নাগরিক অধিকারহীন রোহিঙ্গারা এক রকম বন্দি একঘরে জীবনযাপন করছিল রাখাইনে। এর মধ্যেই বিভিন্ন অজুহাতে চলছিল সহিংস আক্রমণ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে চূড়ান্ত বিপর্যয় নেমে আসে এ সংখ্যালঘুদের জীবনে। নিরাপত্তার অজুহাতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় ভয়াবহ অভিযানে নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ অভিমুখে ঢল নামে বিপন্ন মানুষগুলোর।

এভাবে রোহিঙ্গাদের রাখাইন ছাড়া করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। আজ ২৫ আগস্ট সেই নৃশংস ঘটনার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে অল্প দিনের মধ্যেই বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত খুলে দিয়ে তাদের আশ্রয় দেয় কক্সবাজারের টেকনাফে। এর পর থেকে বিভিন্ন ক্যাম্পে বাস করছে তারা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর থেকেই তাদের স্বদেশে ফেরাতে তৎপরতা শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু দুই বছর পূর্ণ হলেও প্রত্যাবাসন এখনো অনিশ্চিত।

ইতোমধ্যে দুবার প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ভেস্তে গেছে। আবার কবে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলতে পারছেন না কেউই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন অবশ্য সহসাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে যতদিন রাখাইনে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করা না যাবে ততদিন প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত দলের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানকে জাতিগত নিধন ও গণহত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত বলে মন্তব্য করা হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়নি।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গাবিরোধী সেনা অভিযান শুরুর আগে এক বছরে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন বৌদ্ধদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ছোটবড় কয়েকটি সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে ব্যাপক প্রাণহানি ও বাস্তুচ্যুতির পর অং সান সু চির সরকার একটি কমিশন গঠন করে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন ওই কমিশন ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। ‘রাখাইনের জনগোষ্ঠীর জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে’ শীর্ষক ৬৩ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে ৮৮টি সুপারিশ কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এতে রাখাইন রাজ্যে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি এড়িয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান এবং তাদের চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ অবশ্যই তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়। কমিশন এ-ও বলেছে, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট কৌশল ও সময়সীমা ঠিক করতে হবে, যা হবে স্বচ্ছ ও বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

আনান কমিশনের প্রতিবেদন জমার পর দিনই ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনাচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলা হয় বলে দাবি করে মিয়ানমার সরকার। হামলায় পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য নিহত হওয়ার তথ্যও প্রকাশ করা হয়। এর পরই রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে। নির্বিচারে হত্যার পাশাপাশি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। নারী ও মেয়েশিশুদের ব্যাপক হারে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা স্রোতের মতো বাংলাদেশে ঢুকতে থাকে। ২৫ আগস্টের পর সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আগে থেকেই বাংলাদেশে আছে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গার বোঝা এখন বাংলাদেশের ওপর।

আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে রয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তাদের নাম নিবন্ধন করা হয়েছে। এতে ১১ লাখ ১৯ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়।

কূটনৈতিক তৎপরতা : মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও তাদের ফেরাতে প্রথম থেকেই কূটনৈতিক তৎপরতা চালায় বাংলাদেশ। প্রথম দিকে মিয়ানমার সাড়া না দিলেও অব্যাহত চাপের মুখে এক সময় কিছুটা নত হয় দেশটি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দপ্তরের মন্ত্রী উ কিয়া তিন্ত সোয়ে। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, এ জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি করা হবে। এর আগে মিয়ানমার সরকারের আমন্ত্রণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল মিয়ানমারে যান। তিনি অং সান সু চিসহ দেশটির সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। দেশে ফিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না, এমন কথা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কখনই বলেনি।

সমঝোতা স্মারক সই : ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। স্মারকে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার কথা বলা হয়েছে। তবে কবে সেই প্রক্রিয়া শেষ হবে, সে সময়সীমার উল্লেখ নেই। সমঝোতা স্মারকে তিন সপ্তাহের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ ও দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া মাঠপর্যায়ে শুরুর কথা বলা হয়।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির ২৬ দিনের মাথায় গত ১৯ ডিসেম্বর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। দুই দেশের ১৫ জন করে নিয়ে ৩০ সদস্যের সমন্বয়ে এ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে নিজ দেশের নেতৃত্বে আছেন।

মিয়ানমারের বারবার সুর বদল : মিয়ানমার বারবার অবস্থান বদল করার কারণে ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া মাঠপর্যায়ে শুরু করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সে সময় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মাঠপর্যায়ে গঠিত কারিগরি কমিটির প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ার কথা বলা হয়। এ বছরের ১৬ জানুয়ারি মিয়ানমারের নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে ৩০ দফা ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টে সম্মত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। সে লক্ষ্যে টার্মস অব রেফারেন্সের সম্মতিপত্রে সই করেন দুদেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রধান। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোহিঙ্গা যাচাইবাছাই ও প্রত্যাবাসনের জন্য মাঠপর্যায়ে কাজ করবে দুটি কারিগরি ওয়ার্কিং গ্রুপ।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই মিয়ানমার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, চার মাস আগে রাখাইন থেকে পালিয়ে যারা বাংলাদেশের অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের প্রত্যাবাসনের কর্মপদ্ধতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চূড়ান্ত করেছে। ঢাকায় দুই দেশের সম্মতিতে যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কর্মপদ্ধতির দলিল স্বাক্ষরিত হয়, সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, আগস্টের পর থেকে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শেষ হলে ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর যেসব রোহিঙ্গা এসেছে তাদের ফেরত পাঠানো শুরু হবে। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের নেপিদোতে যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল, সেখানেই এটি উল্লেখ আছে।

২০১৮ সালের ১৭ মে প্রত্যাবাসনের জন্য গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক কোন ধরনের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত ও সমাধান ছাড়াই শেষ হয়। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অনিশ্চিয়তা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেই বৈঠকে যাচাই-বাচাইয়ের জন্য নতুন করে রোহিঙ্গাদের আরও একটি তালিকা হস্তান্তর করা হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতির সবশেষ অবস্থা দেখতে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট মিয়ানমার সফর করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকা পরিদর্শন করেন। দেখতে যান ৩০ হাজার লোকের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হ্লা পোই কংয়ের ট্রানজিট ক্যাম্পে। এর পর তিনি শোয়ে জার গ্রামে যান যেখানে ভারত সরকারের অর্থায়নে রোহিঙ্গাদের জন্য ১৪৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পান তাও পাইন গ্রামও পরিদর্শন করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত : ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের এখতিয়ার আছে কিনা জানার জন্য ওই কোর্টের প্রধান কৌঁসুলি ফেতু বেনসুদা একটি আবেদন করেন। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত এবং যদি প্রয়োজন হয় এর বিচার করাই ফেতু বেনসুদার উদ্দেশ্য ছিল। এজন্য তিনি কোর্টের অনুমতি চেয়ে এই আবেদন করেন।

একই বছরের ৭ মে কোর্ট এ বিষয়ে বাংলাদেশের মতামত চাইলে এক মাসের মধ্যে সরকার তাদের গোপন মতামত জানায়। এর পর ২১ জুন মিয়ানমারের মতামত জানতে চান কোর্ট; কিন্তু মিয়ানমার কোনো মতামত দিতে অস্বীকার করে। কোর্ট সব বিষয় বিবেচনা করে ৬ সেপ্টেম্বর অনুকূল রায় দেন। কোর্ট বলেন, ‘অপরাধসংক্রান্ত বিচার প্রত্যাবাসনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস : অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) উদ্যোগে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বছরের ৩১ মে মক্কাতে অনুষ্ঠিত ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে গাম্বিয়ার নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রী পর্যায়ের অ্যাডহক কমিটিকে অবিলম্বে ওআইসির পক্ষ থেকে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মামলা করার পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমার

জেনেভাভিত্তিক হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের উদ্যোগে এটি গঠিত হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, ২০১১ থেকে মিয়ানমারে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত করে প্রমাণ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা। এ বছরের এপ্রিলে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলি নিকোলাস কুমজিয়ানকে এর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন।

দুই দফায় ব্যর্থ প্রত্যাবাসন : দুই দফা তারিখ ঠিক করেও রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরানো যায়নি। প্রথম দফায় গত বছরের নভেম্বরে এবং দ্বিতীয় দফায় গত বৃহস্পতিবার এ উদ্যোগ ভেস্তে যায়। দ্বিতীয় দফায় ৩ হাজার ৫৪০ জনকে ফেরত নিতে অনাপত্তিপত্র দিয়েছিল মিয়ানমার। কিন্তু রোহিঙ্গারা ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচটি দাবি তুলেছেন। এগুলো হলোÑ রোহিঙ্গা স্বীকৃতি দিয়ে নাগরিকত্ব প্রদান, ভিটেমাটি ও জমিজমা ফেরত, আকিয়াব জেলায় এডিবি ক্যাম্পে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়িতে ফেরত, বুচিদং ও মংডু জেলায় বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রোহিঙ্গাদের মুক্তি, হত্যা-ধর্ষণের বিচার ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মোতায়েন।

প্রথম দফার ক্ষেত্রেও এ রকম দাবি জানিয়েছিলেন রোহিঙ্গারা। রাখাইনে পরিবেশ অনুকূল না হলে তারা ফিরতে নারাজ।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ : দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভেস্তে যাওয়ার পর বাংলাদেশ কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রত্যাবাসনে এতদিন দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় জোর দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় পথ খোলা রেখেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের সরকার ও সুশীল সমাজকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পক্ষে জনমত গঠনে সম্পৃক্ত করতে চিঠি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জোরদার করার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি থাকবে। যারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে কাজ করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়