শেখ আদনান ফাহাদ : ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সমস্যা। এ নিয়ে বাংলাদেশকে কেন অপমান করা হবে? ভারতের অনেক মানুষের ধারণা, বাংলাদেশ একটা ফকির দেশ। একটা রাষ্ট্র যখন অবাস্তব সব চলচ্চিত্র দ্বারা আচ্ছন্ন থাকে তখন নিজের এবং পরের রাষ্ট্র সম্পর্কে এমন ধারণা হয়। আর বাংলাদেশে থেকে যারা এখনো মনে করেন, বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র, সেসব হতভাগাদের জন্যও এই তথ্যগুলো। এগুলো আমার কথা নয়, অমর্ত্য সেন আর তার সহ-গবেষকের কথা। অমর্ত্য সেনরা লিখেছেন, ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর ৬৪ বছরে ভারত জিডিপি, মাথাপিছু আয়, আয়ুষ্কাল, নারী শিক্ষা, শিশুমৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণ ও দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এ সাফল্য ম্লান হয়ে যায়। এসব সূচকে উপমহাদেশের সন্ত্রাসাক্রান্ত পাকিস্তান ছাড়া আর সব দেশের অবস্থা ভারতের চেয়ে ভালো। বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৬৯ বছর হলেও ভারতীয়দের গড় আয়ু ৬৫ বছর। শিশুমৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণেও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যুর গড় ৩৭, আর ভারতে সেই সংখ্যা ৪৭। বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচির কারণে জন্মহারও কমিয়ে আনতে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। এ সূচকে বাংলাদেশের জন্মহার ২ দশমিক ২। ভারতের ক্ষেত্রে তা ২ দশমিক ৬।
বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ব্যবহার করে, অথচ ১২০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে মাত্র ৩৪ শতাংশ মানুষ স্যানিটেশনের আওতায় আছে।নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ভারতের চেয়ে কিছু বেশি। আপাতভাবে মনে হয় ভারত বাংলাদেশের চেয়ে অনেক প্রগতিশীল এবং দেশটিতে নারীদের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে ভালো। কিন্তু তথ্য বলছে, বাংলাদেশের ৭৮ শতাংশ নারী শিক্ষার সুযোগ পায়। ভারতে সেই সংখ্যা ৭৪ শতাংশ। শিশুদের সংক্রামক ব্যাধি থেকে রক্ষায় ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের উদ্যোগ ও সাফল্য অনেক বেশি। বাংলাদেশের ৯৬ শতাংশ শিশু সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসার আওতায় এলেও ভারতের মাত্র ৭২ শতাংশ শিশু এ সেবা পাচ্ছে। মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। এশিয়াতে এই পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে ২০১০ সাল থেকে। তখন থেকেই স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এশিয়ার এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর নজর রাখতে শুরু করে। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, মাথাপিছু আয়ের হিসেবে আগামী একদশকে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু কীভাবে? একটি পরিসংখ্যান দেখিয়ে গবেষণায় বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় যেখানে ১,৬০০ ডলার, সেখানে ২০৩০ সালে এই আয় দাঁড়াবে ৫,৭০০ ডলার। একই সময়ে ভারতে মাথাপিছু আয় হবে ৫,৪০০ ডলার। যদিও বর্তমানে ভারতে মাথাপিছু আয় বাংলাদেশের চেয়েও বেশি। ২০১৮ সালে ভারতে মাথাপিছু আয় ছিলো ১,৯০০ ডলার। এই মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি ঘটবে ভিয়েতনামে। বলা হচ্ছে তাদের হিসেবে, ২০৩০ সালে দেশটির মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১০,৪০০ ডলার যেখানে গত বছর এই আয় ছিলো ২,৫০০ ডলার। মিয়ানমারে বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১,৩০০ ডলার এবং ২০৩০ সালে তাদের এই আয় দাঁড়াবে ৪,৮০০ ডলারে। ফেসবুক থেকে