সুজন কৈরী : গাইবান্ধার সাঘাটা এলাকা থেকে অসুস্থ একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন সাঘাটা থানার ওসি। করেন ‘লালটু পাগলা’ নামের ওই ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থাও। কিন্তু ওসি ও চিকিৎসকদের চেষ্টা ব্যর্থ করে লালটু চলে যান পরপারে।
ঘটনাটি কখনকার, কোন স্থানের, তা জানা না গলেও গত ১১ আগস্ট এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়া হয় ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ গাইবান্ধা’র (District Police Gaibandha) পক্ষ থেকে।
পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ‘কবে, কিভাবে, কোথা থেকে কেন এখানে এসেছিল লালটু আর কেনইবা এখানে থেকে গেল সে-উত্তর যেন অজানাই থেকে গেল পুরো সাঘাটাবাসীর কাছে। সহজ-সরল, সদা হাস্যল, নির্লোভ, নিষ্পাপ মনের ভালবাসায় স্থানীয়রা সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজারও প্রয়োজন মনে করে নি কখনও।
ঈদ, পূজা, বিয়ে-পার্বনে মা-বোনদের সাথে গীত-গান গাওয়া অল্পদিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা লালটু জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছিল হয়তো নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার মাঝে। আর তাই, পাড়া-গাঁ, হাট-বাজার ঘুরে যা পেত তা দিয়ে বাচ্চাদের চকলেট-বিস্কুট কিনে দিয়ে শুণ্য হাতে ঘুমোতে যেত খোলা বারান্দা কিংবা ভাঙ্গা গোয়াল ঘরে। সমাজের স্বপ্নবাজদের স্বপ্ন পূরণের প্রক্রিয়ার সাথে বড্ড অসঙ্গতিপূর্ণ লালটু তাই ‘লালটু পাগলা’ বলেই পরিচিতি পেল।
বানভাসি সাঘাটাবাসীর বন্যা পরবর্তীতে এখন তাদের নতুন করে পথ চলার পালা, সবকিছুর সংস্থান, সংকুলান করতেই যখন নাভিশ্বাস, লালটুকে নিয়ে কিভাবে থাকে কারোও ভাববার অবকাশ!!! আর তাই অসুস্থ হয়ে, না খেয়ে, পঁচে পড়ে থাকা দুর্গন্ধযুক্ত লালটুর কাছেও কেউ গেল না, দোকানিরা দোকান বন্ধ করে দিল দুর্গন্ধ থেকে পরিত্রাণ পেতে। লালটুর মৃত্যুই যেন তাদের মুক্তির একমাত্র পথ। কিন্তু সে মরল না বাঁচল এটা বলবে কে?? এ যেন বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধা অবস্থা!!! লালটু যেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিগৃহীত প্রাণী।
খবর পেয়েই ছুটে এলেন ওসি সাঘাটা। এ ছুটে চলার যেন শেষ নেই কবে শুরু হয়েছে সেটাও তার মনে নেই, লালটুর কাছে গেলেন ভালবাসার সুঘ্রাণে সকল দুর্গন্ধ যেন পরাজিত হল আজ। ভালবাসা পেয়ে আলিঙ্গনের আশায় লালটু জানান দিল সে এখনও মরে নাই।। শরীর পরিস্কার করে ভর্তি করালেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ওষুধ, ফলমূল কিনে দেওয়ার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক নিয়োগ দিলেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, পাশে দাঁড়ালেন আপন ভাই কিংবা তারচেয়েও বেশি কিছু রূপে। টানা দুদিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঁঞ্জা লড়া লালটু ভালবাসার শেষ সুতোটাও ছিন্ন করে পরোলোক গমণ করেন। আত্মীয় স্বজনদের না পেয়ে ওসি নিজেই লালটুর দাফন কাফনের ব্যবস্থা করলেন।
আপনার মতামত লিখুন :