সালেহ্ বিপ্লব : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরে গিয়েছিলো এইদিন। ১৯৪৪ সালের ৬ জুন। জল, স্থল ও আকাশপথে সবচেয়ে বড়ো সামরিক অভিযান হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছিলো ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে মিত্রবাহিনীর এই অবতরণ। আর এই অভিযানে অংশ নিয়ে মিত্রবাহিনীর জয়ের পথ সহজ করে দেন যারা, সেই বীর যোদ্ধাদের আজ স্মরণ করেছে ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ মিত্রবাহিনীর পক্ষভূক্ত আর সব দেশগুলো। দিনটি নরমান্ডি অভিযান দিবস ও নরমান্ডি ডে নামেও পরিচিত। উত্তর ফ্রান্সের সাগরপারের শহর গোল্ড বিচে ডি ডের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের এই আয়োজনে স্বাগতিক দেশের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও ব্রিটেনের ভবিষ্যত রাজা প্রিন্স চার্লস অংশ নেন। আর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি বলে খেদ প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যিনি ৭০তম বার্ষিকীতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। বিবিসি
অপারেশনটির অফিশিয়াল নাম ছিলো অপারেশন নেপচুন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপারেশন ওয়ার্ল্ড-এর আওতায় পরিচালিত এই অপারেশনের লক্ষ্য ছিলো, ফ্রান্সকে জার্মানির দখলমুক্ত করা। ১৯৪৩ সালের শুরুর দিকে অপারেশন নেপচুনের পরিকল্পনা আঁটতে শুরু করে মিত্রবাহিনী, দেড় বছরের মাথায় তা কার্যকর করা সম্ভব হয়।
ফ্রান্সের উপকূলীয় এলাকা নরম্যান্ডি তখন হিটলারের সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে চৌকস সেনাপতি ফিল্ড মার্শাল আরউইন রোমেলের নিয়ন্ত্রণে। সামরিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকাটি করায়ত্ত রাখতে হিটলার তার যোগ্যতম সময়নায়ককেই দিয়েছিলেন, সে দায়িত্বপালনে রোমেল ছিলেন সদাতৎপর। তাই ফ্রান্স উপকূলের নিয়ন্ত্রণ নিতে মিত্রবাহিনী আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডার ১ লাখ ৫৬ হাজার সৈন্য অপারেশন নেপচুনে অংশ নেন। তারা নরম্যান্ডি উপকূলের ৫০ মাইল দীর্ঘ একটি সমুদ্রসৈকতে অবতরণ করে ৫টি দলে ভাগ হয়ে। দুর্ধর্ষ সেনাপতি রোমেলকে হটিয়ে ফ্রান্সকে শত্রুমুক্ত করতে প্রায় তিন মাস সময় লেগেছিলো মিত্রবাহিনীর। ১৯৪৪ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে জার্মান বাহিনীর পরাজয় ঘটে। বসন্তদিনের সেই বিজয়ের মধ্যদিয়েই মিত্রবাহিনীর ইউরোপ জয় শুরু হয়।
ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে ডি ডে’র ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন হয়েছে যথাযোগ্য মর্যাদায়। ফ্রান্সের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডায় ডি ডে উদযাপিত হয়েছে।
ফ্রান্সের নরম্যান্ডির সাগরপারের শহর গোল্ড বীচে ছিলো মূল আয়োজন। অনুষ্ঠান শুরু হয় ভোর ৭টা ২৬ মিনিটে লোন পাইপে বাজানো হাইল্যান্ড লেডি’র সুরে। বাজিয়েছেন রয়্যাল আর্টিলারির পাইপ মেজর ট্রেভর ম্যাকি-লিলি। লোন পাইপে ১৯৪৪ সালের এই দিনে এই সময় সোর্ড বীচে এই গানটিই তুলেছিলেন প্রাইভেট সোলজার বিল মিলিন। ফ্রান্স উপকূলে ব্রিটিশ বাহিনীর অবতরণের পর তাদের এক জায়গায় সমবেত করতে স্পেশাল ব্রিগেডের কমান্ডার লর্ড লোভাট তাকে পাইপ বাজানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
যুদ্ধে নিহতদের স্মরণ করা হয় পুষ্পমাল্য দিয়ে। নীরবতা পালনের পর মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে, গান ও ফ্রান্সের রাজকীয় বিমানবাহিনীর দৃষ্টিনন্দন ফ্লাই পাস্ট। অপারেশন নেপচুনের দুই যোদ্ধা হ্যারি রিড (৯৫) ও জন হাটন (৭৪) প্যারাস্যুট জাম্প করেন। ৭৫ বছর পর আকাশ থেকে লাফ দিতে পেরে তুমুল আনন্দিত দুই সৈনিক, তাদেরকে সহযোগিতা করেছে রাজকীয় বিমানবাহিনীর প্যারাস্যুট রেজিমেন্টের ডিসপ্লে টিম।
নরম্যান্ডিতে ঐতিহাসিক অবতরণের ৭৫তম বার্ষিকীতে সেই যুদ্ধের কয়েকশ’ সৈনিক উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বনেতাদের প্রাণখোলা প্রশংসায় তারা আনন্দিত হয়েছেন, যুদ্ধদিনে হারানো সাথীদের স্মরণ করে চোখের জল ফেলেছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে ডি ডে’র যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলার মতো একটা কথাই আছে, ‘থ্যাংক ইউ।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, ডি ডে’র যোদ্ধারা আমাদের স্বাধীনতার সমার্থক। জীবনে কোনোদিন ফ্রান্সে আসেননি, এমন অসংখ্য যোদ্ধা সেদিন জার্মান বাহিনীর গুলী-বোমার তোয়াক্কা না করে এই মাটিতে অবতরণ করেছিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ভাষণে তার দেশের ডে ডে যোদ্ধাদের জাতির গর্ব হিসেবে উল্লেখ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :