আবুল কালাম আজাদ : বাংলাদেশে এখন চলছে বালিশ বিতর্ক। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে বালিশ ক্রয় কেলেঙ্কারির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্র আলোচনা... একটা বালিশের দাম সর্বোচ্চ কতো হতে পারে... তা নিয়ে। ঢাকা শহরে দু’শো টাকা থেকে শুরু করে বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের বালিশ পাওয়া যায়। সাধারণ মধ্যবিত্তের বালিশের দাম দু’শো থেকে চারশো টাকার মধ্যে। ভালো মানের তুলার বালিশের দাম পাঁচশো থেকে সাতশো টাকা। গুলশানের অভিজাত দোকানে পাখির পালকে তৈরি বালিশের দাম দশ থেকে বিশ হাজার টাকার মধ্যে। এসব বালিশ বিদেশ থেকে আমদানি করা।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দামি বালিশ তৈরি করে ঠঅঘ উঊজ ঐওখঝঞ. এই কোম্পানির হাতে তৈরি সাধারণ বালিশের মূল্য চার হাজার ৯৯৫ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় চার লাখ পঁচিশ হাজার টাকা। এই কোম্পানি সম্প্রতি তাদের হাতে বানানো বালিশের গোল্ড এডিশন এনেছে যার মূল্য ৫৬ হাজার ৯৯৫ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য প্রায় ৪৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা! বাইরের দেশে বালিশের যে দামই থাকুক, বাংলাদেশে বালিশ কেনায় প্রথম রেকর্ডটি করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এলে তার জন্য প্রতিটি ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের ৬টি বালিশ কেনা হয়েছিলো। গণপূর্ত বিভাগের নথিপত্রে দেখা যায়... ১৯৯১ সালের ২৯ মার্চ, বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের মঈনুল হোসেন সড়কের বাসা সংস্কার ও নতুন আসবাবপত্রে সজ্জিতকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক পরিপত্রে (স্মারক নং ৬/৯১/ই/প্র) বলা হয়, ‘যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন ব্যবহার করবেন না, সে কারণেই ৬নং শহীদ মঈনুল হোসেন সড়কের বাসভবনের সংস্কার এবং পুনঃবিন্যাস প্রয়োজন।
নিম্নের তালিকা অনুযায়ী, মালামাল দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন সজ্জিতকরণ প্রয়োজন।’ তালিকায় মোট ১২১টি আইটেম ছিলো, এর মধ্যে কুশন, বালিশ, ম্যাট্রেস, চাদর, খাট ছিলো অন্যতম। এই পণ্যগুলো কেনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কয়েকটি চিঠি চালাচালি হয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ৭৮ হাজার টাকা মূল্যে প্যারিস থেকে ৬টি বালিশ কেনা হয়েছিলো। ৬টি বালিশের তৎকালীন মূল্য ছিলো ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এই বালিশগুলো প্যারিস থেকে ঢাকায় আনতে খরচ হয়েছিলো ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এ নিয়ে অডিট আপত্তি হয়েছিলো ১৯৯২ সালে। তখন আপত্তির জবাবে বলা হয়েছিলো যে, প্রধানমন্ত্রীর জরুরি প্রয়োজনের কারণে কার্গো বিমানে বালিশ আনতে হয়েছে। বেগম জিয়া অবশ্য ২য় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হয়ে আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলেন। দলিলপত্রে দেখা যায়, ২০০২ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য ইতালি থেকে ৬টি কুশন পিলো কেনা হয়। যার প্রতিটির মূল্য ছিলো ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ৬টি কুশনের মূল্য পড়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা!
বালিশ বিলাসে এরশাদও কম যান না। এরশাদ রাষ্ট্রপতি হলেও বাস করতেন সেনানিবাসে। কিন্তু তার সব কেনাকাটা হতো বঙ্গভবন থেকে। এরশাদ বালিশ কেনেন সর্বশেষ ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে। এই বালিশগুলো আনা হয়েছিলো ভারতের জয়পুর থেকে। সেসময় প্রতিটি বালিশের মূল্য ছিলো ১৫ হাজার টাকা। ১২টি বালিশের মূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ফেসবুক থেকে