সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু : ‘কবিগুরু আমাদের, আমাদেরই থাকবেন। পৃথিবীর অন্য কোথাও নয়, কেবল বাংলাদেশেই বেঁচে থাকবেন রবীন্দ্রনাথ।’ রবি কবির সার্ধশত বর্ষের এক আলোচনা সভার আলোচক হিসেবে এমন কথা বলে কি বিপাকেই না পড়েছিলাম। সেই বিপাক এখনও ছায়া হয়ে পিছু ধাওয়া করে, দেয়াল তুলে দেয়। আমাকে পারতপক্ষে আর বলবার জন্য ডাকে না, অমি হাসি।
রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্র সাহিত্যের প্রতিটি ইট-কাঠ বাংলা শব্দে-বাক্যে-ভাবে- ভাবনায় গাঁথা। কবিগুরুর সেই বাংলা ভাষাই আজ ভারতবর্ষে ক্ষয়িষ্ণু ভাষা। বিশাল ভারতবর্ষের একটি অঞ্চলের বৃত্তে আটকে আছে। আর সে বৃত্তেও বাংলা ক্রমশ ধূসর হচ্ছে, গুরুত্ব হারাচ্ছে,সঙ্গে হারাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথও। সেদিনের বক্তৃতায় নগদ উদাহরণ টেনে বলেছিলাম... আমি গত দুদিন ধরে ভারতের প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলে ঘুরেছি একমাত্র ‘দূর দর্শন’ আর ‘ডিডি মেট্রো’তে দু-তিনটি অনুষ্ঠান দেখেছি। আর কোথাও রবীন্দ্রনাথকে দেখিনি। অথচ এই সার্ধশত বর্ষে অমাদের প্রতিটি টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠান চলছে গত সাতদিন ধরে,আরও সাতদিন চলবে । এজন্য আমরাই কেবল গর্ব করতে পারি, ভারত পারে না।
ভারতের মিডিয়ায় রবীন্দ্রনাথ এখনই অবহেলিত, সাইড লাইনে সেখানে ভবিষ্যতের হিসাবটা সোজা। আমরা হিসাবে বরাবরই একটা ভুল করি, আমরা পশ্চিমবঙ্গকেই গোটা ভারত বলে ভাবী। ভুলে যাই, কেবল পশ্চিমবঙ্গই ভারত নয়। ভারত নামের বিশাল দেশের খ-াংশ মাত্র। যে দেশে বাংলাই অপাঙক্তেয়, সেদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের বাংলায় লেখা গান-কবিতা-উপন্যাস-গল্পকে বদলে যাওয়া সময়ে, বদলে যাওয়া মানুষেরা ধারণ করবে এটা ভাবা কষ্টকল্পনা ।
ভাষার ইতিহাস বলে, যে ভাষা রাষ্ট্র শাসনের বাহন না হয় সে ভাষা হারিয়ে যায়। ভারতের রাষ্ট্র শাসনের বাহন হিন্দি এবং ইংরেজি, কবিগুরুর বাংলা নয়। ভারতে বাংলা বেঁচে থাকবে ক্ষয়রোগাক্রান্ত মানুষের মতো। আমাদের বাংলাদেশে বাংলাভাষা স্বমহিমায় বেঁচে থাকবে, ¯্রােতস্বিনী নদীর মতো। কেবল বাংলাদেশেই বাংলা ভাষার নদীতে কোনোদিন বালুচর জমবে না। সেই নদীতে প্রাণবন্ত ঢেউ হয়ে ছুটে বেড়াবেন আমাদের রবীন্দ্রনাথ। পবিত্র জন্মদিনে অঞ্জলি লহ কবিগুরু। ফেসবুক থেকে