ইকবাল আনোয়ার : দূর থেকে আবছা মিহি আজানের সুর ভেসে আসে। বুড়ি অন্যদিন হলে এমন সন্ধ্যায় দাওয়ায় বসে বিছমিল্লাহ বলে তিনবারে এক মগ ঠা-া পানি খেয়ে রোজা ভাঙে। আজান দিলে বোঝা গেলো ‘ইফতারির সময় হয়েছে। নবী করিম ( সা.) বলেছেন ‘ইফতারি’ যতো দ্রুত পারা যায় শুরু করতে। এতেই ফজিলত বেশি। বুড়ি কানে কম শুনে। অনেক সময়ই আজানের আওয়াজ কানে পৌঁছে না। পাশের ঘরে হান্নানের মাকে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করতে হয় তার। আজ শহর থেকে নাতি এসেছে। তাই ইফতারির আয়োজন করা হয়েছে। তেলে পেঁয়াজ হাজুমসলা দিয়ে ভাজা বুট। এটা এক অন্য রকম দিন। বুট ভাজা খাওয়া কম কথা নয়। বুড়ি নাতিকেসহ দাওয়ায় বসলো। দু’টা পিড়িতে দু’জন।
হঠাৎ চারপাশ অন্ধকার হয়ে এলো। মেঘে কালো আকাশ। ঝড় শুরু হলো। ধূলি উড়লো বেশুমার। কড়কড়া বালু এসে ভাজা বুটের উপর পড়লো। বুড়ি হায় হায় করে উঠলো। বুড়ির বউ সামলে নিয়ে ঢেকে রাখলো বউলটা। দমকা বাতাস এসে বাঁকানো পাল্লায় ঝুলিয়ে রাখা বুড়ি আর বুড়োর বাঁধানো ছবিটা ফেলে দিলো। এ ঘরের সবচেয়ে দামি সম্পদ ছিলো এটা। বউটা ‘হামিল’। রোজা রাখেনি। তাড়াতাড়ি করে কাচের গুঁড়া শলা ঝাড়ুতে ঝেড়ে নিলো। মাকে বললো, মা সাবধান। কাচ যেন পায়ে না বিঁধে।
বুড়ি কি আর শোনে এসব। প্রায় কেঁদেই দিলো এ রকম ঘটনায়। সত্যি তার পায়ে কাচ বিঁধলো। উহ করে উঠলো বুড়ি। নাতি কুপির আলোয় তার পা থেকে কাচ খুললো। ক্ষত থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করলো। বুড়ির আফসোস, রক্ত ঝরার কারণে তার রোজাটা নষ্ট হয়ে গেলো। রোজা ভেঙে যাবার কষ্টে ফটো ভেঙে যাবার কথা ভুলেই গেলো সে। তারপর সবার মনে হলো ইফতারির কথা। কোনোমতেই বোঝার উপায় নেই। এখন নাতি বলে, নানি বোধহয় ইফতারির সময় হয়ে গেছে। ইফতারি করো। বুড়ি বলে, না হলে? যদি আগে খেয়ে রোজা নষ্ট করি। তারপরও নাতির কথায় ইফতার করে ফেললো সে।
ইফতারীতো কিছু না। কেবল বুট ভাজা। তারপর মাগরিব পড়ে কড়কড়া ভাত খাওয়া। ইফতার শেষে যেই পানি খেতে যাবে, তখন আকাশের মেঘ সরে গেছে। সন্ধ্যা হলো বটে, কিন্তু কিছু আলো দেখা গেলো তখন। ঝড়ো বাতাসের শব্দ মিলিয়ে গেলো, আর তখনই দূর থেকে আজানের ধ্বনি শোনা গেলো। হায় হায়, আগে খেয়ে রোজাটা নষ্ট করলো বুড়ি। নাতিকে কি আর বলে! আদরের নাতি। কতোদিন পর এলো নানির বাড়ি। তাই নিজই নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকলো। বারবার রোজা ভেঙে যাবার ভয়, এমনকি তাদের সাধের যুগল ছবিটা ভেঙে যাবার কষ্টও এর কাছে কিছু নয়। ফেসবুক থেকে