শিরোনাম
◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ

প্রকাশিত : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ০৫:১৮ সকাল
আপডেট : ৩০ মার্চ, ২০১৯, ০৫:১৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আরজ আলী মাতুব্বর : ক্রমাগত আড্ডায় ও তথ্যাধারে তার জুড়ি সত্যিই বিরল

আইয়ুব হোসেন

সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রশাসনের অনেক ব্যক্তির নিকট তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর। অতঃপর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো আরজ আলীর জীবনী লেখার। কথা হলো বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক ড. মাহমুদ শাহ কোরেশীর সঙ্গে। তিনি খুব স্বল্পকালের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে। এক ফেব্রুয়ারি থেকে আরেক ফেব্রুয়ারি এই এক বছর মাত্র তিনি এই দায়িত্বে নিয়োজিত হয়েছিলেন। নিযুক্তি পাবার পর তিনি দুটো বিষয় সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছিলেন। গতিশীলতা এবং বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ লেখকদের বই প্রকাশ। ঘনিষ্ঠতার সুবাদে দ্বিতীয় বিষয়টি আমার নিকট ব্যক্ত করে তিনি দ্রুত পা-ুলিপি দিতে বললেন। আমি আরজ আলীর ব্যাপারটি বিবৃত করে মহাপরিচালক বরাবরে একখানি চিঠিও দিলাম। সম্মতি মিললো তারা প্রকাশ করবেন জীবনী পুস্তক। একসময় জীবনী পুস্তকের পা-ুলিপি লেখা সমাপ্ত হলো। প্রকাশও হলো স্বল্পকালের মধ্যে। মহাপরিচালক মাহমুদ শাহ কোরেশীর ব্যক্তিগত উৎসাহে বইটি দ্রুত অনুমোদন ও সম্পাদনা লাভ করে ছাপাখানা থেকে বেরিয়ে এলো। ঠিক সেসময়ই বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই আরজ আলী মাতুব্বরের জীবনী লেখার উপকরণ সংগ্রহের জন্য আমাকে খোঁজাখুঁজি করছিলেন। তিনি আরজ আলী সম্পর্কে জেনেছিলেন সাহিত্য ও সঙ্গীত অন্তপ্রাণ অ্যাডভোকেট আলী নূর সাহেবের নিকট। প্রায় সমবয়সী এই বন্ধুযুগল পরস্পরকে মামা বলে সম্বোধন করেন। নিকটাত্মীয় কেউ না হলেও দূরাত্মীয় হলেও হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। তবে দু’জনের বাড়ি একই জেলায়। দু’জনের মধ্যে সখ্য ভাব বেশ গভীর। একদিন দু’জনে ধানমন্ডির দু’নম্বরে গে্যঁটে ইনস্টিটিউটে মঞ্চায়িত সক্রেটিস নাটক দেখে ফেরার পথে নূর ভাই সক্রেটিসতুল্য আরজ আলী মাতুব্বরের কথা হাসনাত ভাইয়ের নিকট উত্থাপন করেন। হাসনাত ভাই হতবাক! বাংলাদেশে এমন একজন ব্যক্তি আমাদের অগোচরে থাকতে পারে, এতো ভাবনারও অতীত। নূর ভাইয়ের বয়ানের সঙ্গে হাসনাত ভাইয়ের বিস্ময় একাকার হবার একপর্যায়ে হাসনাত ভাইয়ের উত্তেজিত ঘোষণা এবার ঈদ সংখ্যায় তার উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আরজ আলী মাতুব্বর। এরপরই আমাকে খোঁজাখুঁজি।

আরজ আলীর জীবনী লিখেছি আমি, এটা নূর ভাই জানতেন। তিনিই হাসনাত ভাইকে আমার কথা বলেন এবং একদিন আমাদের দু’জনকে মুখোমুখিও করে দিলেন তার বাসায়। তারপর অসংখ্য দিন নূর ভাইয়ের লালমাটিয়ার বাসার বৈঠকখানায় আমরা বসেছি। এর অদূরে লালমাটিয়াস্থ আমার অপরিসর ডেরায়ও কয়েকদিন বসেছি। আবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অবধি অধ্যাপক মুহম্মদ শামসুল হকের নিকটও আমরা সদলবলে গিয়েছি। যথার্থ একজন গ্রন্থকীট এবং অতিশয় সজ্জন ও প্রগতি চিন্তার এই মানুষটি আরজ আলীকে উদার সহায়তায় সর্বতোভাবে ঋদ্ধ করেছেন। নিয়ামানুগভাবে বিষয়ওয়ারী পুস্তক নির্বাচন, সংগ্রহ ও আলোচনা এগুলো করেছেন তিনি পরম ঐকান্তিকতায়। আরজ আলীর উচ্চতা ও অসামান্যতা উপলব্ধি করে তিনি সহায়তায় মুক্তহাত প্রসারিত করেছিলেন। বস্তুত আরজের জ্ঞানচর্চার শৃঙ্খলা স্থাপনে শামসুল হকের অবদান অসামান্য। সৎ, জ্ঞানভুক ও নির্মল এই মানুষটি দীর্ঘদিন রোগে ভুগে প্রায় এক দশক আগে প্রয়াত হয়েছেন। ক্রমাগত আড্ডায় ও তথ্যাধারে তার জুড়ি সত্যিই বিরল। আশঙ্কাজনকভাবে আমাদের সমাজে এমন মানুষের সংখ্যা ইদানীং কমে যাচ্ছে।

লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়