লিহান লিমা: এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে দুই দিনের ভারত সফরে রয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য-বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা-নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বুধবার দুই দেশ বিনিয়োগ, পর্যটন, আবাসন, তথ্য ও সংস্কৃতি ইস্যুতে ৫টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। সালমান আগামী দুই বছরের মধ্যে ভারতে সৌদি বিনিয়োগ ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এনডিটিভি, ফিনেন্সিয়াল এক্সপ্রেস, বিজনেস টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া
বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর দ্বিপক্ষীয় সংবাদ সম্মেলনে সালমান সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। যুবরাজ বলেন, সন্ত্রাসবাদ আমাদের সকলের চিন্তার বিষয়। আমরা এই ইস্যুতে ভারতের পাশে থাকব। সবরকমভাবে সাহায্য করব। গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সাহায্য করব ভারতকে। সকলকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলব পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার জন্য।’ যুবরাজ আরো বলেন, সৌদিআরব ভারতে ইতোমধ্যে ৪২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। আমি আশা করি আগামী দুই বছরের ভারতে সৌদি বিনিয়োগ ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে।
এই সময় মোদি বলেন, আমরা অনেক দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে ফলপ্রসু আলোচনা করেছি। সৌদিআরব ভারতের কৌশলগত সহযোগি এবং এই সম্পর্ক দশকের পুরনো। যুবরাজ সালমানের নেতৃত্বে এই সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে। আমি ভারতীয় অবকাঠামোতে সৌদি অংশীদারিত্ব এবং আন্তর্জাতিক সোলার এলায়েন্সে সৌদিআরবের যোগদানকে স্বাগত জানাচ্ছি। এখন সময় জ্বালানি সম্পর্ক থেকে কৌশলগত সম্পর্কে যাওয়ার। কিভাবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করা যায় তা নিয়েও আলোচনা করেছি। এই সময় মোদি বলেন, পুলওয়ামা হামলার প্রসঙ্গ সামনে আনেন। মোদি বলেন, যে দেশ সন্ত্রাসবাদে ইন্ধন যোগাচ্ছে, তাদের ওপর চাপ বাড়াতে সহমত হয়েছি আমরা। যে কোন দেশের সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়া প্রতিহত করা হবে। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, সমুদ্র নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে শক্তিশালী সহযোগিতামূলক সম্পর্কে ঐক্যমতে পৌঁছেছি।
মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন যুবরাজ সালমান। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার বলেন, ‘বৈঠকে তারা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন।’
ভারত সৌদিআরবের চতুর্থ বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগি। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিলো ২৭.৪৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ভারতের জ্বালানির অন্যতম সহযোগি দেশ সৌদি। দেশটির অপরিশোধিত তেলের ১৭ ভাগ ও এলপিজির ৩২ ভাগই আসে সৌদি আরব থেকে। সম্প্রতি সৌদির রাষ্ট্রায়াত্ত তেল কোম্পানি আরামকে আমিরাতের এডনোকের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে ভঅরতের রাথনাগিরি রেফাইনারি ও পেট্রো-কেমিক্যাল প্রজেক্ট লিমিটেডের সঙ্গে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের যৌথ অংশীদারিত্ব চুক্তি করেছে। যুবরাজের সফরকালীন আরামকোর সিইও বলেন, আরামকোর কাছে ভারতে বিনিয়োগ প্রাধান্য পাবে।
এর আগে পুলওয়ামা ইস্যুতে ভারতের সংবেদনশীলতার কথা মাথায় রেখে পাকিস্তান থেকে রিয়াদে ফিরে গিয়েছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। মঙ্গলবার রাতে ভারতের বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর প্রটোকল ভেঙ্গে তাকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিবাদন জানান নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোবিন্দ। লাল গালিচা সংবর্ধনায় সিক্ত হয়ে যুবরাজ বলেন, ‘মোদি আমার বড় ভাই। সৌদি আরব ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক আমাদের ডিএনএর মধ্যে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট রামনাথের নেতৃত্বে এই সময়ে আমি নিশ্চিত আমরা সৌদিআরব ও ভারতের জন্য সেরা কিছু বয়ে আনতে পারব।’ বুধবার রাতে চীনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব ছাড়বেন সালমান।