আলী রীয়াজ : ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের মামলায় নির্দোষ জাহালম তিন বছর কারাভোগের পরে মুক্তি লাভ করে পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরেছেন- এটা স্বস্তিদায়ক। এ রকম কতোজন জাহালম যে কতো ধরনের ভুলের কারণে কারাগারে আছেন তা আমাদের জানা নেই। সম্প্রতি সুলতানা কামাল বলেছেন যে, ‘বাংলাদেশের জেলখানাগুলোতে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বিনা বিচারে আটক রয়েছেন’ এবং আরো উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ‘বন্দিদের মধ্যে একটি বড় অংশই কোনো ধরনের অপরাধ না করেই জেলখানায় বন্দি হয়ে আছেন’। জাহালম যদিও আইন ও বিচার বিভাগের চোখে ‘অপরাধী’ হিসেবেই জেলে ছিলেন, কিন্তু আমরা এখন জানি যে তাকে যারা দোষী বলে চিহ্নিত করেছে তারা তাদের দায়িত্বের বরখেলাপ করেছেন ফলে আসলে তিনি ছিলেন ‘কোনো ধরনের অপরাধ না করেই জেলখানায় বন্দি’। নির্দোষ এই পাটকলকর্মীকে দুদকই ‘ভুল করে’ আসামি হিসেবে উপস্থাপন করেছিলো। ইতোমধ্যে জাহালমকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি উঠেছে। জাহালম বলেছেন, ‘যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছে এবং যে দুদকের লোকেরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছে তাদের শাস্তি চাই’।
দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা তদন্ত করে দেখবে পুরো ঘটনায় কী কী অনিয়ম হয়েছে, খুঁজে বের করতে কমিশনের আইন শাখার পরিচালক আবু হাসনাত মো. আব্দুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এটা তো দুদকের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ব্যবস্থা, কিন্তু প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদকের যে দায়িত্বে বরখেলাপ হলো তার জন্য দুদকের তদন্ত কে করবে? এই দায়িত্ব আসলে মানবাধিকার কমিশনের, কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের ওপরে আস্থা রাখার কোনো কারণ নেই। জবাবদিহির ব্যবস্থাহীন রাজনৈতিক ও শাসন পরিস্থিতি থাকার ফলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে সেই নিজের তদন্ত করে, যার ফল কী হয় তা আমরা দেখতে পাই। সে কারণেই মানবাধিকার সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দাবি তোলা দরকার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের। পাশাপাশি আমাদের বোঝা দরকার আসল গলদটা কোথায়। ফেসবুক থেকে