নাঈমা জাবীন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, এখন আমরা অগ্রগতির চেয়ে উন্নতির কথাই বেশি বেশি করে বলছি। ধারণাগুলো তো ইংরেজি ভাষাতেই আছে, অগ্রগতি হলো প্রগ্রেস আর উন্নতি হচ্ছে ডেভেলপমেন্ট। যুগটা এখন যতোটা না প্রগ্রেসের তার চেয়ে বেশি ডেভেলপমেন্টের। সূত্র : ভোরের কাগজ
উন্নতি আমরা চাই বৈকি, উন্নতি খুবই প্রয়োজন। স্থিতাবস্থা বলে তো আসলে কিছু নেই, উন্নতি না ঘটলে বুঝতে হবে অবনতি চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো কোন ধরনের উন্নতি আমরা চাই। উন্নতিটা কী হবে খাড়াখাড়ি পাহাড়ের মতো? নাকি অন্য ধরনের। পাহাড়ের সামাজিক ভূমিকা আছে বৈকি। সে মেঘকে থামিয়ে দিয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বরফ জমিয়ে ঝরনার সৃষ্টি করে। কিন্তু উন্নতি যদি পর্বতপ্রতিম হয় তাহলে তো ভীষণ বিপদ। কেননা পর্বত তো হৃদয়হীন। সে তো পাষাণে গড়া।
চতুর্দিকে আজ যে উন্নতি দেখছি সেটা কিন্তু ওই পাহাড়ের মতোই, ক্ষেত্র বিশেষে সে জগদ্দল পাহাড়ই। উন্নতির পাহাড়গুলো দূরের নয়, খুবই নিকটের, তারা মানুষের বুকের ওপর, ঘাড়ের ওপর চেপে বসে আছে। অনুন্নত মানুষের দশাটা এখন পাহাড়ে মাথা ঠোকার মতো। তাহলে কী উন্নতি চাই আকাশের মতো? না, তাও নয়। উন্নতি আকাশচারী হোক এটা চাইবো না। তাকে থাকতে হবে ভূমিতেই। চাইবো কী যে উন্নতি নেমে আসুক বৃষ্টির মতো? না, তাও নয়, কেননা বৃষ্টিপাত স্থায়ী হয় না এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে প্লাবন ঘটে, সব কিছু তলিয়ে যায়, ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। তিনি বলেন, আমরা বৃষ্টি নির্ভরতা চাইবো না, যেমন চাইবো না প্লাবন। উন্নতি হওয়া দরকার নদীর মতো।
নদীর মতোই সে সর্বত্রগামী হবে, হবে সৃষ্টিশীল, ভূমিকে উর্বর করবে, চলমানতা আনবে যানবাহনে। একদিকে হবে সে সমুদ্রমুখী, অন্যদিকে তার নিত্য বিচরণ ঘটবে জনভূমিতে। ধারণ করবে সে পাহাড়ি বৃষ্টিপাত ও ঝরনাকে, পুষ্ট রাখবে খাল, বিল-নালাকে। ভালো কথা, ওই যে সমুদ্র এবং খাল-বিল নালা এদের যেন আমরা না ভুলি। সমুদ্রকে উপেক্ষা করে এখন আক্ষরিক অর্থেই আমরা সমুদ্রকে হারাচ্ছি, আবার জলধারা ও জলাশয়কে অবজ্ঞা করে তাদের শুকিয়ে যেতে দিয়েছি। আমাদের সমুদ্র চলে যাচ্ছে অন্যের দখলে, জলাশয়গুলো সামাজিক মালিকানা থেকে চ্যুত হয়ে পরিণত হচ্ছে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে। উন্নতির এ ধরনটির চরিত্র হচ্ছে পুঁজিবাদী।