শিরোনাম
◈ জুলাই অভ্যুত্থানের সেই ঐক্য কোথায়? ◈ ব্রিটিশদের ‘নাকানিচুবানি’ দিতে ইরানের এক দশকের ‘ছায়া যুদ্ধ’: যেভাবে চলছে যুক্তরাজ্যের ভেতরে গোপন তৎপরতা ◈ চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত, আরও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ◈ এবার অঝোরে কাঁদলেন মিসাইল ম্যান কিম জং উন (ভিডিও) ◈ জুলাই নিয়ে ‘আপত্তিকর’ ফেসবুক পোস্ট: পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অবরোধ-বিক্ষোভ ◈ নতুন উচ্চতায় রেমিট্যান্স: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের সর্বোচ্চ প্রবাহ ◈ ডলারের দরপতনে রেকর্ড, ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনে বিশ্ববাজারে আস্থার সংকট ◈ “৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই চব্বিশের যোদ্ধাদেরও জাতি ভুলবে না” — তারেক রহমান ◈ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে বুধবার  সি‌রি‌জের প্রথম ওয়ানডে ম‌্যা‌চে  মু‌খোমু‌খি  বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৪:১৮ সকাল
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৪:১৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিজয়ের মাসের অঙ্গীকার

ড. সেলিম জাহান : বিজয়ের মাস এসো গেলো – সাতচল্লিশ বছর আগে ১৬ ডিসেম্বর নয় মাসব্যপী একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম স্বাধীনতার লাল সূর্যকে। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। সে বিজয় শুধু একটি ভূখন্ডের নয়, নয় একটি মানবগোষ্ঠীর - সে বিজয় একটি চেতনার,একটি সংগ্রামের, একটি ইতিহাসের।  সে বিজয় তো সীমাবদ্ধ নয় একটি দিবসে - তা অনুরণিত প্রতিদিন, প্রতি পলে, প্রতি প্রাণে।

স্বাধীনতার একটি অন্তর্নিহিত মাত্রিকতা আছে, কিন্তু স্বাধীনতা কোনো বিমূর্ত ধারণা নয়। অন্যদিকে বিজয়েরও একটি বর্হিঃমাত্রা আছে, কিন্তু বিজয়তো বোধের। সুতরাং বিজয় বা স্বাধীনতা শুধু উদযাপনের নয়, চেতনারও। এবং সেই চেতনা ধারন করতে হবে বর্ষব্যাপী, প্রতিটি মানুষের হ্দৃয়ে - যারা ১৯৭১ দেখেছি, তাদের এবং যারা দেখেনি, তাদের।

আমরা যারা বিজয় দেখেছি, তাদের একটি অংশ সেই চেতনাকে ধারণ করে রাখতে পেরেছি। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও তো সত্য যে আমরা অনেকেই সেই চেতনা বিস্মৃত হয়েছি এবং আমাদের কেউ কেউ বেপথুও তো হয়েছি। স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখেছে, কিন্তু স্বীকার করে নি, তাদের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের চেতনাকে আমরা যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সাক্ষী, তাদের জন্য নতুন করে ফিরিয়ে আনতে হবে।

আসলে পুরো প্রেক্ষিতটি অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ আমাদের তরুণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, যারা বিজয় দেখেনি। তারা মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনেছে, কিন্তু দেখেনি। মুক্তিযুদ্ধ তাদের কাছে হয়তো একটি কল্পকাহিনী, বিজয় তাদের কাছে সুদূর অতীতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তরুণ  প্রজন্মের একটি আবেগী কিংবা একটি বুস্তুনিষ্ঠ যোগ সবসময় নাও থাকতে পারে। কারণগুলো সঙ্গতই - হয়তো কেউ তাদের বিষয়টি ঠিকভাবে বলেনি কিংবা তাদের পাঠ্যক্রমে তা অনুপস্থিত থেকেছে বা বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। এ অবস্থায় বিভ্রান্তিমূলক ধারণারও জন্ম হতে পারে সহজেই।

বেদনার সঙ্গে বলতে হয় যে, আজকের বাংলাদেশে এ অবস্থাটির কমতি নেই এবং সেটা শঙ্কাজনক। এ প্রবণতা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধারন করবে না বিজয়ের সত্যিকারের চেতনা, জানবে না মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস। ভবিষ্যতের দিনগুলোতে আমাদের জাতিসত্তার অহংকার, আমাদের ঐতিহ্যের ইতিহাস, আমাদের চেতনার ভিত্তি বিলুপ্তির পথ এ প্রক্রিয়া প্রশস্ত করে দেবে।

কিন্তু এ চেতনার শিক্ষা, এ ইতিহাসের জ্ঞান বিমূর্তভাবে কিংবা দার্শনিকভাবে হয় না। নানান প্রতীকির ব্যবহার, নানান বাস্তব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ উদ্দেশ্য সাধিত হতে পারে। এই যেমন, বিলেতের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মারক পপি ফুলের নকশা থেকে লন্ডনে বিজয় পুষ্পে বিজয় স্মরণের কল্পনাটি এসেছিলো।

বিজয় পুষ্পে বিজয় স্মরণ ধারনাটির ব্যাপ্তি বিস্মৃততর ও গভীরতর। মৌলিকভাবে বিজয় পুষ্প আমাদের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পরে বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক বিজয়ের এক উজ্জ্বল প্রতীক এবং স্মারক - এর মাধ্যমে আমরা আমাদের বীর মুক্তিযাদ্ধাদের এবং তাদের অবদানের কথা স্মরণ করি। আমাদের প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাই তো এক একটি বিজয় পুষ্প।

বিজয়পুষ্পে বিজয় স্মরণ একটি পন্থাও বটে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশ, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের কথা বলতে পারি - বিশ্ববাসীর কাছে। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও তাদের শিকড়ে নিয়ে যেতে পারি। সেই সঙ্গে আমরা সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়তে পারি। সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে চেনানোর জন্যে এবং বিদেশিদের কাছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় ব্যাখ্যার জন্যেও তো এ প্রক্রিয়ার তুলনা নেই।

বিজয়পুষ্পে বিজয় স্মরণ প্রক্রিয়া মানুষের সঙ্গে মানুষকে সম্পৃক্ত করে যৌথ চেতনার সৃষ্টি করে। অবাক মানি যখন দেখি, ছোট-বড় সবাই মিলেমিশে কতো সহজে বিজয় পুষ্প বানায় - কেমন করে শিশুরা তা বানানো শেখে, কেমন করে পরিবারের সবাই মিলে গোল হয়ে এ কাজে মত্ত। সঙ্গে সঙ্গে চলে গল্প - দেশের, ইতিহাসের, মুক্তিযুদ্ধের। তারপর সে পুষ্প পরা হয় পোশাকের ওপরে বুকের বাঁ পাশে। সেটা শোভা পায় বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ১ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত।

প্রশ্ন জাগে কেন একদল প্রবাসী মানুষ পাগলপারা হয়ে এর স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমার মনে হয়,এর পেছনে তিনটে কারণ ছিলো। প্রথমত এ মানুষগুলোর প্রত্যেকেই এক টুকরো বাংলাদেশ তাদের হৃদয়ে বয়ে বেড়াচ্ছিলেন। সুতরাং সময় যখনই যেখানে নিয়ে গেছে, তাঁরা যে ভাবেই পারেন ঐ টুকরোটিকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন চারদিকে সবার মাঝে। দ্বিতীয়ত এদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম এবং একাত্তরের সন্তান। সুতরাং তারা সবসময়ই চেয়েছেন যাতে আমরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভুলে না যাই এবং ঐ বীরদের যথাযথ স্বীকৃতি ও যোগ্য মর্যাদা দেই। তৃতীয়ত: তারা স্বপ্ন দেখেছিলেন যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস জাগরূক থাকুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। তারা সচেষ্ট ছিলেন যাতে প্রবাসে আমাদের ভবিষ্যৎ সন্তানেরা তাদের শেকড় হারিয়ে না ফেলে। দেশের বাইরে এ জাতীয় উদ্যোগ একটি অঙ্গীকার থেকে জন্ম নেয়, সেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থ গৌণ।

শেষের কথা বলি। বিজয়পুষ্পে বিজয় স্মরণ ধারণ করে আছে আমার দেশ, তার ইতিহাস, তার মুক্তিযুদ্ধ, তার ঐতিহ্য আর মূল্যবোধ আর আমি ধারণ করে আছি সে প্রক্রিয়া সারা বছর আমার হৃদয়ে - ওটাই তো আমার অঙ্গীকার।

লেখক : অর্থনীতিবিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়